সহদেব পরামানিক : স্বপ্নপূরণে হাতছানি লটারি ,জঙ্গলমহলের খেটে খাওয়া মানুষজনের অদৃশ্য ভাগ্য ফেরানোর প্রয়াস । স্বপ্ন কে না দেখে ? রাতারাতি যদি বড়লোক হওয়া যায় । হঠাৎ যদি গাড়ি-বাড়ির মালিক হওয়া যায়, তবে সেটা কে না চায়! মানুষের এত সময় কোথায় যে পরিশ্রমের মাধ্যমে উপার্জন করে কিম্বা বিন্দু বিন্দু দিয়ে টাকা সঞ্চয় করে তারপর স্বপ্ন পূরণ -সেই ধৈর্য মানুষের কোথায়! তাই একশ্রেণীর মানুষ সহজ সরল পথ হিসেবে বেছে নিয়েছে লটারি কাটা । প্রথমে শুরুটা হয় ভাগ্যের চাকা ফেরাতে এক – আদদিন টিকিট কাটা , তারপর ধীরে ধীরে তার গতি বাড়ে, পরিমাণ বাড়ে এবং অবশেষে নেশা বাড়ে। এক সময় লটারি টিকিট কাটার নেশা চরম পর্যায়ে পৌঁছে যাচ্ছে। মাদকাসক্তদের মতোই লটারি টিকিট কাটার নেশা পরিত্যাগ করা তখন অসম্ভব হয়ে পড়ছে। পরিবারে সংসারে অশান্তি নৈমিত্তিক বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। সরকারি কর্মচারী থেকে শুরু করে একেবারে দিন আনি দিন খাওয়া শ্রমজীবী মানুষেরাও বাদ যায়নি এর আসক্তি থেকে ।বড়বাজার থেকে শুরু করে গ্রামের অলিগলি ছোটখাটো মোড়গুলিতে এখন গড়ে ছয়- সাতটা লটারির কাউন্টার ৷ মোড়গুলির বাকি দোকানগুলিতে কেনাবেচা ঠিকঠাক না চললেও লটারির ব্যবসা বেশ রমরমা। এখন তিন বেলায় চলে খেলা এবং খেলার ফলাফল প্রকাশ। সকাল বিকাল দোকান খুলে দেব দেবীর ফটোতে মালা টাঙ্গিয়ে ধূপ জ্বালিয়ে দোকানের শুভারাম্ভ তারপর আর পিছন ফিরে তাকাতে হয় না। একটা টেবিল আর একটা চেয়ার, ব্যাস! এই পরিকাঠামোই নিমেষে হাজার হাজার টাকার ব্যবসা। যে ব্যবসায় খদ্দের-দোকানদার দরকষাকষি নেই, বিল ভাউচার নেই, ঠোঙা – ক্যারিব্যাগের ব্যবহার নেই, এমনকি খদ্দেরকে বসতে দেওয়ার আসনেরও প্রয়োজন নেই। খদ্দের আসবে নম্বর একটু বাছাবাছি করবে এবং টিকিট নিয়ে চলে যাবে এটাই প্রতিদিনের ছবি। জঙ্গলমহলের গ্রামে গঞ্জের মোড়গুলিতে খদ্দের বাড়ে সন্ধ্যার দিকে। ভাগ্যের চাকা ঘোরাতে দিনমজুর, ক্ষেতমজুর, মুনিষ – শ্রমিক সারাদিনের কাজের শেষে মজুরি পেয়ে সানন্দে সন্ধ্যায় লটারির দোকানে এসে হাজির হয়ে যায়। এই মানুষগুলোর সারাদিনের ঘাম ঝরানো পারিশ্রমিকের একটা মোটা অংশই চলে চলে যায় লটারির দানে। এভাবেই সকাল-সন্ধ্যা জঙ্গলমহলের নানা প্রান্তের গ্রামীন রোজগারের কোটি কোটি টাকা লটারিতে চলে যায়। এই জুয়া দিন প্রতিদিন গ্রামীণ জীবনের স্বাচ্ছন্দকে মলিন করে তুলছে। গ্রামীণ অর্থনীতিকে সোজা হয়ে দাঁড়াতে না দেওয়ার অন্যতম কারণই হচ্ছে লটারির রমরমা ব্যবসা বলে মনে করছে একশ্রেণীর মানুষ। লটারিতে আসক্তি বাড়ছে প্রতিদিন। বিশেষ করে যুব সমাজের মধ্যে এই আসক্তির মাত্রা ছাড়াচ্ছে। ভাগ্য ফেরানো ,ভাগ্যবান হওয়ার অদৃশ্য হাতছানি এভাবেই গ্রামীণ অর্থনীতিকে পঙ্গু করে দিচ্ছে ।