অরিজিৎ মাইতির রিপোর্টঃ
অবুঝ দুটি সবুজ প্রাণ
ছুটেছে কিসের সন্ধানে
প্রভু এক করে দাও– যোগ করে দাও– হলুদ সুতার বন্ধনে–।
বিদ্যার দেবী মা সরস্বতীর কাছে ব্রাহ্মণের মন্ত্র পাঠে অবুঝ দুটি মনকে আজ এক করে দিলেন নিহারীকা সংস্থার সদস্য বৃন্দ গণ। পূর্ব মেদিনীপুরের মহিষাদল বাজারের খিরিশ তলার নিষিদ্ধ পল্লীর এক যৌনকর্মী বাড়ি মুর্শিদাবাদের লালগোলা গ্রামে। নাম ঝুমা ঘোষ- বাবার নাম তরুণ ঘোষ। বয়স একুশ বছর। বাবা মায়ের মৃত্যুর পর বন্ধুদের এক চক্রে সে এই জায়গায় এসে পৌঁছে যায়। সে চারদেয়ালের ভিতরে অন্ধকার জগতে আর থাকতে চায় না। সে সংসার করে মা হতে চায়। ঝুমা মা ডাক শোনার জন্য আকুল – ব্যাকুল হয়ে উঠে। মহিষাদল থানার বাসুলিয়া গ্রামের বাসিন্দা ছোট্টু দাস (২৬ ) বাবার নাম সনাতন দাস। ছোটু জীবিকা হিসাবে হোটেল ব্যবসায়ী। ছোট্টুর বড়দাদা বিহারের একটি ইনভারসিটি ইংরেজির লেকচার ।মহিষাদল বাজারের বিভিন্ন জায়গায় হোম ডেলিভারি হিসেবে সকাল -সন্ধ্যা খাবার অর্ডার অনুযায়ী পৌঁছে দেয়। সে ওই পল্লীতে সকাল-সন্ধ্যা খাবার পৌঁছে দিত। সেই সূত্রে যৌনকর্মী ঝুমা ঘোষ -এর সঙ্গে তার ভালবাসার মিলন ঘটে । দুজন দুজনকেই খুবই ভালোবাসে। তারা পরস্পরকে সংসার করার প্রস্তাব দেয় ।দুজনেই রাজী হয়ে যায় সংসার করার জন্য। মহিষাদলের একটি সমাজ সেবী সংস্থা নিহারীকা । সেই সংস্থার সম্পাদক মানস কুমার বেরা এবং সভাপতি জীবন দে কে তাদের ভালোবাসার কথা বলে ছোট্টু । এ দিন ছোটুর বাবা সনাতন দাস এবং তার দিদি -জামাইবাবু ক্লাব প্রাঙ্গণে উপস্থিত হয়। তাদের উপস্থিতিতে সংস্থার সমস্ত সদস্য বৃন্দ গণ ব্রাহ্মণ এবং বিবাহ রেজিস্টার অফিসারকে সংস্থার ভিতরে ডেকে বিদ্যার দেবী সরস্বতী মায়ের সামনে একটি বিবাহ বন্ধন এর আনুষ্ঠানিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। সংস্থার সদস্যরা হোম থিয়েটার থেকে সানাই বাজাতে শুরু করে এবং আতশ বাজি ফাটাতে থাকে আনন্দ উচ্ছ্বাসে । আতশবাজির আওয়াজে পথচলতি মানুষদের ভিড় জমে ক্লাব প্রাঙ্গণে। মহিষাদল পুরাতন বাস স্ট্যান্ডের এক প্রবীণ ব্যক্তি পঙ্কজ চ্যাটার্জী জানিয়েছেন এই সংস্থাটি আজকে একটি মহৎ কাজ করে সমাজে দৃষ্টান্ত করল। সংস্থার অন্যতম সদস্য শম্ভুনাথ দাস মা – বাবা হারা যৌনকর্মী ঝুম্পা ঘোষকে নিজের বোন হিসেবে আজকে নতুন শাড়ি দিয়ে সম্প্রদান করলেন বিবাহ অনুষ্ঠানে।