মালদা , ৮ এপ্রিল। রিকশাচালকের মেয়ে, আর সম্ভ্রান্ত ঘরের ছেলের মধ্যে দীর্ঘদিনের প্রেম । আর তারপরে রেজিস্ট্রি করে বিয়ে। আর এই বিয়ের পরেই শুরু হয় বিপত্তি। স্ত্রীর মর্যাদা না দিয়ে প্রেমিকাকে বাড়িতে নিয়ে গিয়ে ব্যাপক মারধর করে তাড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে স্বামীসহ শ্বশুরবাড়ির লোকেদের বিরুদ্ধে। এই ঘটনার পর গত ২৭ মার্চ পুরাতন মালদা থানার অন্তর্গত মঙ্গলবাড়ী পুলিশ ফাঁড়িতে স্বামী, শ্বশুর-শাশুড়ি এবং এক ননদের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন নির্যাতিতা ওই গৃহবধূ। কিন্তু তাকে এবং তার পরিবারকে মামলা তুলে নেওয়ার জন্য ক্রমাগত প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ। বিষয়টি জানতে পেরে অসহায় ওই মহিলার পাশে দাঁড়িয়েছে স্থানীয় একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। এই ঘটনার পর অভিযুক্তদের বাড়িতে অভিযান চালালেও কারও সন্ধান পায় নি বলে জানিয়েছে পুলিশ । পাশাপাশি পুরো বিষয়টি নিয়ে বেশ কয়েকটি ধারায় মামলার শুরু হয়েছে। কিন্তু তারপরেও ক্রমাগত ওই মহিলার ওপর প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ । তার কারণে রীতিমতো আতঙ্কে রয়েছেন ওই মহিলা ও তার পরিবার।
পুলিশ ও নির্যাতিতা মহিলা পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, পুরাতন মালদা পুরসভার মঙ্গলবাড়ী পাড়াসামুনডি এলাকার বাসিন্দা ফাতেমা খাতুনের সঙ্গে দীর্ঘদিনের সম্পর্ক ছিল সালাম শেখের সাঊ। অভিযুক্ত সালাম শেখের বাড়ি পুরাতন পুরসভার মঙ্গলবাড়ি খয়েরাতি পাড়া এলাকায় । গত বছর ৭ নভেম্বর মুসলিম ধর্ম মতে ওই দুইজন রেজিস্ট্রি করে বিয়ে করেন। বিয়ের পর কয়েক মাস ধরে বাবার বাড়িতেই ছিলেন ফতেমা খাতুন এবং জামাই সালাম শেখ। বিয়ের পর থেকেই শশুর বাড়ি যাওয়ার জন্য স্বামীকে বারবার বলেন ফাতেমা খাতুন। কিন্তু নানা অছিলায় সালাম শেখ স্ত্রীকে নিজের বাড়িতে নিয়ে যাওয়া নিয়ে টালবাহানা করে । এরপর স্বামী সালাম থেকে ছলচাতুরি বুঝতে পেরে গত বছর ডিসেম্বর মাসে নিজেই আগ্রহ দেখিয়ে শ্বশুরবাড়ি জান ফাতেমা খাতুন। আর তারপরেই শুরু হয় নির্মম অত্যাচার । দুই লক্ষ টাকা পনের দাবি করে নববধূকে ব্যাপক মারধর শুরু করে স্বামীসহ শ্বশুরবাড়ির লোকেরা। পেটে লাথি মেরে এবং লোহার রড দিয়ে রীতিমত মারধর করা হয় নববধূকে । খুনের আশঙ্কা করে কোনরকমে শ্বশুর বাড়ি থেকে পালিয়ে নিজের বাবার বাড়িতে আশ্রয় নেন ওই নববধূ ফাতেমা খাতুন।
নির্যাতিত গৃহবধূ ফাতেমা খাতুন বলেন , গতবছর বিয়ের পর থেকে স্বামীর সঙ্গে একাধিকবার সহবাস হয়েছে। বিভিন্ন জায়গায় ঘুরতে গিয়েছি । নানান অন্তরঙ্গের ছবি মোবাইলে বন্দি রয়েছে। রেজিস্ট্রি করেও আমরা বিয়ে করেছি । কিন্তু কোন কিছুই ছেলের বাড়ির লোকেরা মানতে চাইছে না। এমনকি দুই লক্ষ টাকা পণের দাবি করছে। গরিব পরিবারের পক্ষে এত টাকা দেওয়া সম্ভব নয় । আর এই অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে অবশেষে মঙ্গলবাড়ী পুলিশ ফাঁড়িতে সালাম শেখ, শশুর আব্দুল শেখ শাশুড়ি সেলিনা বিবি এবং এক ননদ সিমরান খাতুনের বিরুদ্ধে নির্যাতনের অভিযোগ দায়ের করেছি। তারপর থেকেই আমাদের পরিবারকে ক্রমাগত ফোন করে গুন্ডা দিয়ে খুন করার হুমকি দেওয়া হচ্ছে। তাতেই আমরা বাড়ি থেকে বেরোনোর সাহস পাচ্ছি না। এরপরই এলাকার একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার দ্বারস্থ হয় তাদের সহযোগিতা নিয়ে মামলা শুরু হয়েছে। এখন আমাদের চরম আতংকের মধ্যে থাকতে হচ্ছে।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, অভিযুক্ত ওই যুবক ওষুধের ব্যবসায়ী এছাড়াও গৃহশিক্ষকতা সঙ্গে যুক্ত । জমি জায়গার ব্যবসা রয়েছে তাদের। এদিকে যার বিরুদ্ধে অভিযোগ সেই সালাম শেখ ও তার পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তারা কোন মন্তব্য করে নি। মঙ্গলবাড়ী ফাঁড়ির তদন্তকারী পুলিশ কর্তা জানিয়েছেন, অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে পুরো বিষয়টি নিয়ে তদন্ত শুরু হয়েছে। অভিযুক্তর বাড়িতেও কয়েকবার যাওয়া হয়েছিল। কিন্তু বাড়িতে কেউ না থাকায় তাদের গ্রেপ্তার করা যায় নি । বিষয়টি নিয়ে নির্দিষ্ট ধারায় মামলা শুরু হয়েছে।