মিশন আইসিইউ তামেংলং-এ একটি অত্যাধুনিক আইসিইউ বেড ফেসিলিটি চালু করলো


ইন্দ্রজিৎ আইচঃ দেশের গুরুতর স্বাস্থ্যসেবা পরিকাঠামোর উন্নতির বিষয়ে দৃষ্টি নিবদ্ধ করে তৈরি একটি সামাজিক উদ্যোগ, মিশন আইসিইউ কান্তারের সহায়তায় জেলা ও উপ-জেলা হাসপাতালের চাপ মেটাতে মনিপুরের তামেংলং জেলা হাসপাতালে চালু করল তাদের নিজস্ব একটি অত্যাধুনিক ১০ শয্যার আইসিইউ ফেসিলিটি। এই উদ্যোগটি আসন্ন সম্ভাব্য করোনা সংক্রমণের চতুর্থ তরঙ্গের ক্ষেত্রে রোগীদের সহায়তার নিদারুণ প্রয়োজন মেটানোর বিষয়ে হাসপাতালের গুরুত্বপূর্ণ পরিষেবা পরিকাঠামোকে শক্তিশালী করার একটি পদক্ষেপ। মিশন আইসিইউ ইতিমধ্যেই সারা দেশে ১০০টি আইসিইউ শয্যা স্থাপন সম্পন্ন করেছে এবং এখন তামেংলং থেকে শুরু করে গুরুতর স্বাস্থ্যসেবা পরিকাঠামো উন্নত করতে ভারতের উত্তর-পূর্ব রাজ্যগুলির জেলা হাসপাতালের সঙ্গে কাজ করবে।

এই উদ্যোগ সম্পর্কে বলতে গিয়ে মিশন আইসিইউ-এর কো-ফাউন্ডার শ্রী মনোজ শাহ বলেন, “আমাদের লক্ষ্য হল একটি সাসটেইনেবল প্রভাব তৈরি করা যা কোভিড-এর বাইরে গিয়েও স্থায়ী হতে পারে। এইভাবে সরকারি হাসপাতালগুলিকে অত্যাধুনিক আইসিইউ বেড ফেসিলিটি দিয়ে সজ্জিত করছি আমরা৷ আমাদের সংস্থার কেন্দ্রস্থলে আমরা তৈরি করেছি শক্তিশালী এক পরিকাঠামো। মিশন আইসিইউ ইতিমধ্যেই সারা দেশে ১০০টি আইসিইউ বেড স্থাপনে সফল হয়েছে। আমরা আমাদের পার্টনার, কান্তারের সহযোগিতার জন্যও কৃতজ্ঞ, যে এর আগে গদগ (কর্নাটক) এবং নবরঙ্গপুর (ওড়িশা) এ আইসিইউ বেড ফেসিলিটি স্থাপনের ক্ষেত্রে আমাদের সাহায্য করেছে৷ একটি অবস্থানের প্রতিশ্রুতি থেকে, আমরা অনেক দূর এগিয়েছি, এই পার্টনারশিপের অংশ হিসেবে তামেংলং হচ্ছে আমাদের ৩য় প্রকল্প। আমরা এইবার ভারতের উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলিতে ফোকাস দিয়ে আমাদের ক্রিয়াকলাপগুলিকে আরও বাড়িয়ে তুলতে চাইছি। তামেংলং থেকে শুরু করে এবার এরপরে উত্তর-পূর্বের রাজ্যের আরও কয়েকটি জেলায় আমরা নজর দিচ্ছি যাতে ভবিষ্যতে কোনও স্বাস্থ্য পরিষেবার ক্ষেত্রে সম্ভাব্য সংকটের মোকাবিলা আমরা করতে পারি এবং চাপের মধ্যে থাকা হাসপাতালগুলির চাপ মুক্ত করতে পারি।”

কান্তার দক্ষিণ এশিয়া-র চেয়ারপার্সন- ইনসাইটস ডিভিশন প্রীতি রেড্ডি, চেয়ারওম্যান বলেন, “মিশন আইসিইউ ভারতের প্রত্যন্ত অঞ্চলে গুরুত্বপূর্ণ স্বাস্থ্যপরিষেবা পরিকাঠামোর উন্নতির জন্য অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে। মণিপুরের তামেংলং-এ নতুন ১০টি আইসিইউ বেড ফেসিলিটির ইনস্টলেশন সম্পূর্ণ করার জন্য আমি অবশ্যই টিমকে অভিনন্দন জানাতে চাই। তারা ১১ তম এই ফেসিলিটিটি ইনস্টল করেছে। মিশন আইসিইউ-এর প্রচেষ্টাগুলি জীবন রক্ষাকারী স্বাস্থ্যপরিষেবার ক্ষেত্রে অ্যাকসেসহীন ব্যক্তিদের জীবনকে উন্নত করবে। তাদের এই কাজ কান্তারের দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। আমরা মিশনের আইসিইউ-এর প্রশংসনীয় কাজের সঙ্গে যুক্ত হতে পেরে গর্বিত এবং তাদের এই প্রচেষ্টায় টিমের সাফল্য কামনা করছি।”

মণিপুরের বেশ কয়েকটি জেলায় চিকিৎসা পরিকাঠামোর অবস্থার বিশদ অধ্যয়নের পরে এই স্থানটিকে বেছে নিয়ে তালিকাভুক্ত করা হয়েছিল। সমস্ত জেলা এবং উপ-জেলা হাসপাতালের অবস্থা বোঝার জন্য একটি ডিলিজেন্স ফর্ম জেলা সার্জন/সিভিল সার্জনদের কাছে পাঠানো হয়েছিল। এর পরে সহায়তা পাওয়ার জন্য তামেংলংকে সবচেয়ে যোগ্য বলে মনে করা হয়েছিল, কারণ, বর্তমান ক্রিটিক্যাল কেয়ার পরিকাঠামো`র ক্ষেত্রে সক্ষমতার বিচারে এই হাসপাতালটিতে অপর্যাপ্ত সুবিধা রয়েছে। মিশন আইসিইউ দ্বারা ইনস্টল করা নতুন ক্রিটিক্যাল কেয়ার ফেসিলিটি এই হাসপাতালের সুবিধা ২০০শতাংশ বৃদ্ধি করেছে। এই সেটআপের মাধ্যমে, মিশন আইসিইউ তামেংলং-এর সাব-ডিস্ট্রিক্ট হাসপাতালেও সহায়তা করবে এবং যেহেতু উপ-জেলা হাসপাতালগুলি তাদের কম দৃশ্যমানতার কারণে বাহ্যিক সহায়তা পেতে প্রায়ই ব্যর্থ হয় এবং সেই ক্ষেত্রে মিশন আইসিইউ-এর লক্ষ্য, এহেন উদ্যোগের মাধ্যমে এই ব্যবধানটি দূর করা।

কম-সুবিধাযুক্ত গ্রামীণ হাসপাতালের ক্রিটিক্যাল কেয়ারের পরিকাঠামোর ফাঁক পূরণ করার পাশাপাশি, মিশন আইসিইউ ‘আইসিইউ ম্যাপিং প্রকল্প’-এর বিষয়েও কাজ করছে যা উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলি থেকে শুরু করে সারা দেশে গুরুত্বপূর্ণ স্বাস্থ্যপরিষেবা পরিকাঠামোর মানচিত্রের উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করবে। মিশন আইসিইউ-এর দর্শনের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে, এই ‘আইসিইউ ম্যাপিং’ উদ্যোগের লক্ষ্য হল, আন্ডার-রিসোর্সড হাসপাতালে ক্রিটিক্যাল কেয়ার স্বাস্থ্যপরিষেবা সুবিধার বর্তমান অবস্থার অন-গ্রাউন্ড বাস্তবতা চিহ্নিত করা এবং সেগুলিকে নথিভুক্ত করা, যাতে ডেটা চালিত অন্তর্দৃষ্টি থেকে আহরণ করে একটি শক্তিশালী ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা তৈরি করা যায়।

“আমরা মিশন আইসিইউ-এর সহায়তায় আমাদের পরিষেবাগুলিকে প্রসারিত করার সম্ভাবনায় উচ্ছ্বসিত, যা আমাদের তামেংলং-এর মত প্রত্যন্ত অঞ্চলে রোগীদের উন্নত গুনমানসম্মত ক্রিটিক্যাল-কেয়ার ফেসিলিটি প্রদান করতে সাহায্য করবে৷ নতুন আইসিইউ বেডগুলি ক্রিটিক্যাল রোগীদের জন্য চিকিৎসা ফেসিলিটিকে ব্যাপকভাবে বাড়িয়ে তুলবে এবং আমাদের কর্মীদের মধ্যে আরও আস্থা তৈরি করবে। কোভিড-১৯ অতিমারি চলাকালীন সময়ে, আমরা আইসিইউ বেডের ভয়াবহ প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করেছি। আমাদের আইসিইউ ওয়ার্ড প্রতিষ্ঠার স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দেবার জন্য আমরা টিম মিশন আইসিইউ এবং সংশ্লিষ্ট সকলের কাছে কৃতজ্ঞ।” বললেন মনিপুরের তামেংলং জেলা হাসপাতালের সিএমও ডাঃ জি মাজাচুংলু।

১০টি আইসিইউ বেড ফেসিলিটির প্রতিটি সেটের দাম প্রায় ৪৫ লক্ষ টাকা। মিশন আইসিইউ-এর অপারেশনাল খরচ ইউ.এস. এজেন্সি ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্টের (ইউএসএআইডি) সমরিদ্ধ স্বাস্থ্য উদ্যোগ দ্বারা সমর্থিত। কোভিডের সময় রোগীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় অতিরিক্ত বেড-এর প্রয়োজন মেটানোর ক্ষমতা, জনসংখ্যার অনুপাত এবং বিদ্যমান চিকিৎসা পরিকাঠামোর মত অসংখ্য কারণের বিষয়গুলিকে যাচাইকরণের পরে হাসপাতালগুলিকে সাহায্য করার জন্য বাছাই তালিকাভুক্ত করা হয়েছিল।

হেলথ ও ওয়েল-বিয়িং-এর জন্য ২০২১-২২-এর বাজেট বরাদ্দে ১৩৭শতাংশ বৃদ্ধির সঙ্গে, ভারত ধীরে ধীরে একটি শক্তিশালী স্বাস্থ্যপরিষেবা পরিকাঠামো বিকাশের লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। মিশন আইসিইউ, গ্রামীণ ও শহুরে এলাকার মধ্যে ব্যবধান দূর করার জন্য তার উচ্চাভিলাষী দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে, অপ্রতুলতাকে চিহ্নিত করার জন্য এবং এর অত্যাধুনিক আইসিইউ বেড ফেসিলিটি`র ব্যবস্থা করার সঙ্গে ঘাটতি`র বিষয়গুলিকে মোকাবিলা করার জন্য একটি অক্লান্ত যাত্রা চালু রেখেছে।

মিশন আইসিইউ সম্পর্কে: মিশন আইসিইউ হল একটি সহযোগিতামূলক উদ্যোগ যা সিএইচডি গ্রুপ দ্বারা চালিত হয়। এর একমাত্র উদ্দেশ্য, স্বাস্থ্যপরিষেবা পরিকাঠামোকে বৃদ্ধি করা। ডাঃ অশ্বিন নায়েক, মনোজ শাহ এবং ডাঃ এডমন্ড ফার্নান্দেসের ব্রেনচাইল্ড, মিশন আইসিইউ যেকোনও স্বাস্থ্যপরিষেবা সংকটের মোকাবিলার জন্য প্রস্তুতি বাড়ানো এবং দীর্ঘমেয়াদী ইতিবাচক প্রভাব সহ একটি সাসটেইনেবল সলিউশন গড়ে তোলার লক্ষ্যে কাজ করে চলেছে।

About The Author


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Verified by MonsterInsights