গোপাল বিশ্বাস -নদীয়া- গত ৭ই জুলাই দেশ জুড়ে মহাসমারোহে পালিত হয়েছিল রথ যাত্রা উৎসব। ব্যাতিক্রমি ছিলোনা ইস্কনের প্রধান কার্যালয় মায়াপুর পরিচালিত রাজাপুর গ্রামের অবস্থিত জগন্নাথ মন্দিরের রথ যাত্রা উৎসব। যথাযথ মর্যাদায় ও ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান মেনেই এ বছরও কয়েক হাজার ভক্ত সমাগমে সম্পন্ন হয়েছে মায়াপুরের রথ যাত্রা উৎসব। আর নিয়মানুযায়ী রথ যাত্রার দিন প্রভু জগন্নাথ দেব, বলরাম ও মাতা সুভদ্রা দেবী রথে চেপে যান তার মাসি বাড়িতে। আর প্রতিবছরই রাজা পুরের জগন্নাথ মন্দিরের থেকে রথ শুরু হয়ে পৌঁছায় ইস্কন মন্দিরে, সেখানেই করা হয় অস্থায়ী মাসি বাড়ি বা গুন্ডিচা মন্দির। জানা যায় মায়াপুরের ইসকন মন্দিরকেই জগন্নাথ দেবের অস্থায়ী মাসি বাড়ি হিসেবে ধরা হয়। এবং পুনঃ রথ যাত্রা পর্যন্ত দেবতাদের স্থাপন করে পূজা করা হয় মায়াপুর ইসকন মন্দিরে। এ বছরও গত ৭ই জুলাই রাজাপুর থেকে অস্থায়ী মাসী বাড়ি অর্থাৎ মায়াপুর ইসকনে এসেছেন প্রভু জগন্নাথ বলদেব ও মাতা সুভদ্রা দেবী। ইসকন মন্দিরের ভেতরেই সাজানো হয়েছে জগন্নাথ দেবের মন্ডপ। সেখানেই চলছে প্রত্যহ জগন্নাথ দেবের ৫৬ ভোগের সহিত বিভিন্ন অনুষ্ঠান, আর যাতে যোগ দিয়ে মাতোয়ারা হতে দেখা যাচ্ছে দেশ-বিদেশের হাজার হাজার ভক্ত।
প্রতিদিন ভক্তের ঢল দেখা যাচ্ছে চোখে পড়ার মতো। ভোর সাড়ে চারটের সময় শুরু হয় মঙ্গল আরতি। এরপর প্রতিদিন দুপুর সাড়ে বারোটার সময় ৫৬ ভোগ দেওয়া হয় জগন্নাথ দেবের সামনে। শুধু এই ৫৬ ভোগই নয় সাথে থাকে দেশ বিদেশের বিভিন্ন পদ, তার মধ্যে থাকে পাস্তা, বার্গার, ক্রিমরোল, ডোনাট আরো রকমারি।ইস্কনের জনসংযোগ আধিকারিক রসিক গৌরাঙ্গ দাস জানান যথাযথ মর্যাদায় এবছরও রথ যাত্রা উৎসব পালন করা হচ্ছে ইস্কনের প্রদান কার্যালয় মায়াপুরে, প্রতিদিন চলছে জগন্নাথ দেবের বিশেষ পুজো, সাথে থাকছে বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠান, পাশাপাশি তিনি আরও জানান প্রতিদিন প্রভু জগন্নাথ দেব, বলরাম ও মাতা সুভদ্রা দেবীকে সাজানো হয় বিভিন্ন বেশে , কোন দিন তাদের গজ বেশ তো কোন দিন সোনার আবরণে, পুনঃ রথ যাত্রার আগে পর্যন্ত প্রতিদিনই চলবে মঙ্গল আরতি ও ৫৬ ভোগের আরতি। এছাড়াও প্রতিদিন জগন্নাথ দেবের আটটি শ্লোকে আরতি হয় মায়াপুর ইসকন মন্দিরে। তিনি আরও বলেন আগামী ১৫ তারিখ অনুষ্ঠিত হবে পুনঃ রথ যাত্রা উৎসব, আর সেদিন নিজের বাড়িতে রওনা দিবেন প্রভু জগন্নাথ দেব,বলরাম ও মাতা সুভদ্রা দেবী। কিন্তু জগন্নাথ দেবের বোগে এত রকমারি কেন? প্রশ্নের উত্তরে রসিক গৌরাঙ্গ দাস জানান যেহেতু জগন্নাথ দেব খাদ্য রসিক ছিলেন সেই কারণে তার পছন্দের খাবার যেমন কেক লাড্ডু থেকে শুরু করে পাস্তা এবং প্রিয় ফল কাঁঠাল ভোগ দেওয়া হয়। দেশ-বিদেশের শতাধিক ভক্ত তারা এই জগন্নাথ দেবের ৫৬ ভোগ অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন এবং প্রতিদিন প্রায় দুই হাজার মানুষকে জগন্নাথ দেবের প্রসাদ বিতরণ করা হয়। সব মিলিয়ে রথ যাত্রা উৎসব কে ঘিরে ইস্কনের মায়াপুরে যে পরিমান ভক্ত সমাগম ও তাদের উন্মাদনা চোখে পরছে তা আর পাঁচটা উৎসবের থেকে কম কিছু নয় তা বলাই বাহুল্য।