ইতি বিনোদিনী নাম করণের মধ্যে দিয়ে দেখানো হয়েছে, দেড়শো বছরের অধিক সময়ের পর, বিনোদিনী বর্তমান সময়ে মঞ্চে অবতরণ করে, এ পত্রের মধ্যে দিয়ে, তার আত্নকথা দীর্ঘ তিনঘন্টার নাটকের মাধ্যমে, এখনকার প্রজন্মকে জানাতে চেয়েছেন। অভিনেত্রী বিনোদিনী হয়ে উঠতে তার লড়াইয়ের জীবন চরিত। সে জীবন আজ তলিয়ে গেছে, ইতিহাসের পাতায়। গল্পের শুরুতেই সেদিনের বিনোদিনী পত্র লেখা শুরু
করেন। আমরা ফিরে যাই ফ্ল্যাশ ব্যাকে। বারো বয়সের বিনোদিনী যার মঞ্চে। অবতরণ মাত্র বার বছর বয়সে, ভুবন মোহন নিয়োগক থিয়েটারে প্লেট ন্যাশানান্তে। পরবর্তী কাজে শরৎ ধোষের বেঙ্গল – থিয়েটারে এবং পরবর্তী সময়ে, গিরিশ ঘোষের পরিচালনায় শামাল থিয়েটারে তাঁর শিক্ষকতায় যোগ্য অভিনেত্রীর শিরোপা। তিনি দু’হাত ভরে তুলে নিয়েছিলেন। বাংলার পাশাপাশি ইংরাজি সাহিত্যেও তাঁর পরম আচার্য্য শ্রী গিরিষ ঘোষের কাছে শিল্পপাট নাটকে আধুনিকতার স্বার্থেই। মধ্যজীবনে বঙ্গ-রঙ্গমঞ্চে বিনোদনের প্রতিষ্ঠা, নাম ও খ্যাতির চূড়ামনি যখন সে।
থিয়েটারের ভাঙনে গিরিশবাবুর ইচ্ছায় একের পর এক মালিক এসেছেন, থিয়েটারে ব্যবসা করার নামেই, বিনোদিনীর সঙ্গ সুখের প্রতীক্ষায়। এদিকে থিয়েটার বিদ্বেষী তার প্রথম প্রেমিক কাশীর জমিদার রাঙাবাবু। বিনোদের তৃপ্তির ভালোবাসা, কোন দিন তাকে ভুলতে পারেনি। কিন্তু তার নাট্যাচার্য গিরিশ ঘোষের কঠোর নির্দেশেই রাঙাবাবুকে ত্যাগ করতে বিনোদ বাধ্য হয়। কিন্তু প্রতাপচাঁদ জহরী, গুর্মুখ রায় মুসাদ্দি প্রতাপচাঁ পুমুখী রাম মুজাদি শেষ মেষ কেউই থিয়েটার কে ধরে রাখতে পারেনি। শেষে এসে দাঁড়ান, গিরিশবাবুর ইচ্ছেতেই জ্যোতিরিন্দ্র ঠাকুর এসে দাঁড়ান। থিয়েটারের ব্যবসার পাশে, বিনোদিনীর ঘনিষ্ঠ সম্পর্কেই তার ইতি টানেন। ইতিঅবসরে তার পাশে প্রতিষ্ঠিত অভিনেত্রীদের কারো স্নেহ স্পর্শ তাঁকে আঘাত করতেও ছাড়েনি। জীবন যুদ্ধে ক্ষত বিক্ষত বিনোদিনী নদের নিমাই ও শ্রী চৈতণ্য লীলা নাটকের পরে ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণের স্পর্শে চৈতন্য লাভের মধ্যেই এক ঈশ্বরবাদী জগৎ তিনি লাভ করেন। বিনোদিনীর বাকি জীবন শুধু ঈশ্বর ভক্তির সাজুয্যে কাটিয়ে দিয়ে যান। “আমার আমি তাঁর আত্মজীবনীর পত্র পরিচয় নাটকের শুরুতেই তার বর্ণনা, শেষ ভাগে যবনিকার প্রাক কালেই ইতি টানেন। সেই বিনোদিনী দীর্ঘ তিনঘণ্টার নাটকে, গান-নাচ অভিনয়ে সম্পদ। মঞ্চস্থাপত্য, আলো, আবহ সব মিলিয়েই নাটকটি অন্য মুহূর্ত সৃষ্টি করে। অভিনয়ে ছাব্বিশজনের টিমওয়ার্ক দলগত অভিনয়ে চলনসই। নাটক রচনা ও পরিচালনায় ছিলেন গিরিশ রূপী গৌরীনাথ বন্ধ্যোপাধ্যায়। অবশেষে বলা যায়, থিয়েটার প্লেসের নাটকটি ধ্রুপদী প্রযোজনা।