মালদায় নির্বাচনী সভায় এসে রাজ্যের তৃণমূল সরকারকে আক্রমণ করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী


সুমিত ঘোষ মালদা: ২৬ হাজার পরিবারের রুজি – রোজগার শেষ করে পথে বসিয়েছে তৃণমূল সরকার। এসএসসি মামলায় উচ্চ আদালতের রায়ের পর মালদায় নির্বাচনী সভায় এসে রাজ্যের তৃণমূল সরকারকে আক্রমণ করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। শুক্রবার সকাল ১১টা ১০ মিনিট নাগাদ উত্তর মালদা লোকসভা কেন্দ্রের পুরাতন মালদা ব্লকের সাহাপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের নিত্যানন্দপুর মাঠে নির্বাচনী সভায় যোগ দেন প্রধানমন্ত্রীর নরেন্দ্র মোদি। হেলিকপ্টার করে কলকাতা থেকে মালদা নির্বাচনে সভায় যোগ দিতে আসেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি । সেখানেই ২০ মিনিট বক্তব্য রাখতে গিয়ে মূলত রাজ্যের তৃণমূল সরকার এবং কংগ্রেসকেই সমালোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তিনি বলেন, এরাজ্যে উন্নয়নের বদলে শুধু দুর্নীতি হয়েছে। এসএসসি চাকরি প্রার্থীদের চাকরি চলে যাওয়ার কারণে আজকে প্রায় ২৬ হাজার পরিবার রুজি – রোজগার হারিয়েছে, এজন্য তৃণমূল সরকার দায়ী। কারণ চাকরি প্রার্থীরা অনেকেই ঋণ নিয়ে তৃণমূলের লোকদের টাকা দিয়েছিল । আর চাকরি চলে যাওয়ার পর তাদের এখন দিশেহারা অবস্থা। তৃণমূল যুব সমাজের উন্নয়নের রাস্তা বন্ধ করে দিয়েছে। এমনকি সারদা, রোজভ্যালি চিটফান্ড কাণ্ডে এরাজ্যে গরিব মানুষদের পথে বসিয়েছে তৃণমূল সরকার। চিটফান্ডে জন্য গরীব মানুষের মাথায় হাত পড়েছে।
এদিন পুরাতন মালদার নিত্যানন্দপুর মাঠে এই নির্বাচনী জনসভায় বিপুল মানুষের জমায়েত দেখেই এবং মোদি স্লোগান শুনে মাঝপথে এই বক্তব্য থামিয়ে সাধারণ মানুষকে তাদের ধৈর্যের জন্য সাধুবাদ জানান প্রধানমন্ত্রীর নরেন্দ্র মোদি। তাঁর আগে প্রধানমন্ত্রী মঞ্চে ওঠার পর রেশম বস্ত্র দিয়ে এবং মাথায় মুকুট পরিয়ে শুভেচ্ছা জানান উত্তর ও দক্ষিণ মালদা লোকসভা কেন্দ্রে দুই প্রার্থী খগেন মুর্মু এবং শ্রীরূপা মিত্র চৌধুরী । পাশাপাশি বিজেপির জেলা নেতৃত্বের পক্ষ থেকেও একাধিক উত্তরীয় এবং নানান মোমেন্টো দিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে শুভেচ্ছা জানানো হয়।
এদিন নির্বাচনী মঞ্চে বক্তব্য রাখতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রীর নরেন্দ্র মোদি বলেন , এই বাংলায় এক সময় বিজ্ঞান, কৃষি, আধ্যাত্মিক সহ বিভিন্ন ভাবে সাধারণ মানুষের বলিদান রয়েছে। এই বাংলায় একটা সময় দেশের নেতৃত্ব দিয়েছিল। কিন্তু তারপরে এই বাংলায় ক্ষমতায় আসে বামেরা। পরে এসেছে তৃণমূল। ওদের শাসনে বাংলার সম্মান নষ্ট হয়েছে । তৃণমূল সরকার হাজার হাজার কোটি টাকা দুর্নীতি করেছে। একাধিক চিটফান্ড মামলা, রেশন থেকে কয়লা দুর্নীতি সহ নানান অপকর্মে জড়িয়েছে । যার ফল ভুগতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে। এরাজ্যে এমন কোন কাজ নেই যেটা কমিশন ছাড়া করা হয় । কৃষকদের কাছ থেকেও ফসল বিক্রির টাকা কমিশন হিসেবে নিয়েছে তৃণমূলীরা। উন্নয়নের বদলে বাংলায় শুধু দুর্নীতি হয়েছে। এই তৃণমূল সরকার যুবকদের ভবিষ্যৎ নিয়ে খেলছে।
এদিন তৃণমূলের পাশাপাশি কংগ্রেসেরও তুমুল সমালোচনা করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তিনি বলেন , কয়েকটি রাজ্যের কংগ্রেস ক্ষমতায় রয়েছে। কিন্তু ওরা সাধারণ মানুষের মাথার উপর ট্যাক্সের বোঝা বাড়াতে চাইছে। একটা আইন আনার চেষ্টা করছে কংগ্রেস। যেখানে আদিবাসী থেকে সাধারণ মহিলাদের মঙ্গলসূত্র থেকে অলংকার এমনকি সাধারণ মানুষের সম্পত্তির ৫৫ শতাংশ কর বসানোর চেষ্টা চালানো হচ্ছে। এই ধরনের ব্যবস্থা কখনোই মেনে নেওয়া যায় না । জাতীয় নাগরিকপঞ্জি “সিএএ” করা হয়েছে নাগরিকত্ব গঠন করার জন্য। অথচ তৃণমূলরা বলছে অন্যরকম কথা। সিএএ নিয়ে মানুষের মধ্যে বিভ্রান্তির চেষ্টা করা হচ্ছে। মা মাটি মানুষের কথা বলে বিশ্বাসঘাত করা হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেন , দেশে ক্ষমতায় আসার পর মুসলিম মহিলাদের জন্য তিন তালাক ব্যবস্থা তুলে দেওয়া হয়েছে। তাতে সর্বসম্মতিক্রমে মুসলিম মহিলাদের একটা বড় অংশ সমর্থন জানিয়েছে। আর তৃণমূলীরা এই তিন তালাকের অন্যরকম ব্যাখ্যা করেছিল। তাতে কোন লাভ হয় নি। আমরা কাশ্মীরে ৩৭০ ধারা তুলে দিয়েছি। অথচ সেই ৩৭০ ধারা নিয়ে বিভ্রান্তিতে ফেলার চেষ্টা করেছিল কংগ্রেস এবং তৃণমূল। দেশের জনগণের সমর্থন ছিল বলেই আমরা এই আইন লাগু করতে পেরেছি। আসলে কংগ্রেস এবং তৃণমূলের গাঠবন্ধন যে এক, সেটাও মানুষের কাছে পরিষ্কার হয়ে গিয়েছে। ওরা লোক দেখানো বিরোধিতা করে তলে তলে একে অপরকে নিয়ে চলছে।
এদিন মালদার সুস্বাদু ফল আম এবং রেশম শিল্প নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর নরেন্দ্র মোদি বলেন, মালদার আম এবং রেশমের সুনাম গোটা দেশজুড়ে রয়েছে। আম এবং রেশম শিল্পের পরিকাঠামো উন্নয়নের ক্ষেত্রে ফুড ইন্ডাস্ট্রিস তৈরি করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কিন্তু এরাজ্যের তৃণমূল সরকার সেটা হতে দিচ্ছে না। একইভাবে সাধারণ মানুষের চিকিৎসা ক্ষেত্রে আয়ুষ্মান ভারত যোজনায় ৫ লক্ষ টাকা করে আর্থিক সাহায্য দেওয়ার ব্যবস্থা রেয়ে। কিন্তু সেই আয়ুষ্মান ভারত প্রকল্পের সুবিধা এ রাজ্যের মানুষকে পেতে দিচ্ছে না তৃণমূল সরকার। পশ্চিমবঙ্গে ৫০ লক্ষ কৃষকদের জন্য ৮ হাজার টাকা করে দিয়েছে কেন্দ্র সরকার। কিন্তু তার অধিকাংশই আটকে রেখেছে তৃণমূল সরকার। পশ্চিমবঙ্গে ৮০ লক্ষ শৌচাগার তৈরি হয়েছে কেন্দ্রের বরাদ্দ অর্থে। কেন্দ্রীয় আবাস যোজনায় প্রকল্পের মাধ্যমে গরিব মানুষদের ঘর করে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সেই টাকা থেকে দুর্নীতি করছে তৃণমূল । তাহলে আপনারাই বলুন এত দুর্নীতি হলে এই রাজ্যের উন্নয়নের বিকাশ ঘটবে কি করে।
এদিন বক্তব্য রাখার সময় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেন, মালদায় পৌঁছানোর সময় হেলিকপ্টার থেকে আমি সভাবঞ্চের মানুষের জনজোয়ার দেখে হতবাক হয়ে গিয়েছে। প্রখর তাপদহের মধ্যে এত মানুষের ভালোবাসা যে আমাকে জানানো হবে তা ভাবতেই পারে নি। আপনাদের আশীর্বাদেই মালদার দুটি লোকসভা কেন্দ্রের প্রার্থীরা বিপুল ভোটে জয়ী হবে। পাশাপাশি মালদা নির্বাচনী সভা থেকে বাংলার উন্নয়ন জোয়ার আনা হবে বলেও জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।

About The Author


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Verified by MonsterInsights