নবদ্বীপ ধামে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে মহাসমারোহে পালিত হচ্ছে শ্রী গৌরাঙ্গ মহাপ্রভুর ৫৩৯ তম শুভ আবির্ভাব মহোৎসব।


গোপাল বিশ্বাস, নদীয়া- “নবদ্বীপ হেনগ্রাম ত্রিভুবনে নাই / যঁহি অবতীর্ন হৈলা চৈতন্য গোঁসাই”

বিশ্ব বাসীর কাছে এক অন্যতম ধর্মীয় স্থান নদীয়ার নবদ্বীপ ধাম। যাকে কেউ চৈতন্য নগরী, বা মন্দির নগরী তো কেউ আবার সনাতনী ধর্মের পীঠস্থানও বলেথাকে। আর এই শহরের এত গুরুত্বের অন্যতম প্রধান কারন, এখানেই জন্মগ্রহণ করেছিলেন নিমাই, বা গৌরাঙ্গ মহাপ্রভু। কারে কাছে তিনি চৈতন্য মহাপ্রভু, কারে কাছে নদের নিমাই, আবার কারো কাছে গৌরাঙ্গ মহাপ্রভু। তার জন্ম দিবস হলো দোল পূর্ণিমা তিথিতে সে কারনে এই দোল উৎসব বা দোল পূর্ণিমাকে গৌড় পূর্ণিমাও বলে থাকেন। আর গৌরাঙ্গ মহাপ্রভুর শুভ আবির্ভাব তিথি এবছর যা ৫৩৯ তম বর্ষে পদার্পন করলো। আর এই উপলক্ষে নবদ্বীপ এখন উৎসবের আমেজে গা ভাসিয়ে সাজো সাজো রব,। আর প্রতিবছরের মতো এ বছরও বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে নবদ্বীপ শহরের উত্তরাঞ্চলে অবস্থিত প্রাচীন মায়াপুরে শ্রী শ্রী গৌরাঙ্গ মহাপ্রভুর জন্মস্থান আশ্রম কতৃপক্ষের তরফে।যেখানে প্রতিদিন অনুষ্ঠিত হচ্ছে শ্রীমদ্ভাগবত পাঠ, লীলাকীর্ত্তন,সহ বিভিন্ন অনুষ্ঠান। জন্মস্থান আশ্রম সুত্রে জানা যায় এবছরের অনুষ্ঠানে অনুষ্ঠানের সূচনা হয়েছে গত ২০শে মার্চ, যার সমাপ্তি হবে আগামী ২৭ শে মার্চ। এর মধ্যে ২৫শে মার্চ সোমবার, শ্রী কৃষ্ণের দোলযাত্রা, তথা গৌড়পূর্ণীমা, ঐ দিন বিকেলে নাম সংকির্ত্তন, শোভাযাত্রা সহকারে গঙ্গাবারি আনয়ন, সন্ধ্যায় হবে মহাপ্রভুর অভিষেক, ও জন্মলীলা কীর্ত্তন। ২৬শে মার্চ মঙ্গলবার সকালে চৌদ্দমাদল শোভাযাত্রা, ও নগর সংকীর্তন, ২৭শে মার্চ, মহাপ্রভুর চৌষট্টি মহান্তের ভোগরাগ ও মহাপ্রসাদ বিতরণ। এ ছাড়াও নবদ্বীপ শহরের মহাপ্রভু পাড়া ধামেশ্বর মহাপ্রভু মন্দিরেও শুরু হয়েছে দোল পূর্ণিমা উপলক্ষে বিশেষ অনুষ্ঠানের, এ ছাড়াও এই বছর দোল উৎসবে নবদ্বীপ ধাম পরিক্রমার আয়োজন করা হয়েছিল যা গত ১৪ ই মার্চ শুরু হয়ে, ১৯শে মার্চ সমাপ্তি হয়েছে, আর এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন “পদ্মশ্রী পুরস্কার প্রাপ্ত স্বামী শিবানন্দ বাবা, যার বর্তমান বয়স ১২৬বছর। আর এই দোল উৎসবে নবদ্বীপে ঘটেছে কয়েক লক্ষ্য ভক্ত সমাগম। সাধারণত এই দোল উৎসব সাধারণত শ্রী কৃষ্ণের দোল উৎসব বলে প্রচলিত হলেও, নবদ্বীপে এই উৎসব পুরোটাই গৌরাঙ্গ মহাপ্রভু ময়, আর এই উৎসবে বিভিন্ন মঠ মন্দিরের পাশাপাশি শহরের বিভিন্ন এলাকায় চলে গৌরাঙ্গ মহাপ্রভুর পুজো, পাশাপাশি শহরের গানতলা,ঢপওয়ালি মোড়, প্রাচীনমায়াপর বাজার,এলাকা, প্রাচীন মায়াপুর যুবদল ক্লাব সহ বিভিন্ন সংগঠনের উদ্যোগেও চলে ভন্ডারার মাধ্যমে প্রসাদ বিতরণ, সেখানে কোথাও বিতরণ করাহয়, খিচুড়ি, কোথাও পুশ্পান্ন, কোথাও পায়েস তো কোথাও ঘুগনি। আর শহরর এই বৃহৎ উৎসবে শহরকে সাজাগে ও দর্শনার্থীদের অভ্যর্থনা জানাতে শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় আলোকমালায় সাজিয়ে তুলেছে নবদ্বীপ পৌর সভার তরফে, পাশাপাশি শনিবার থেকে সোমবার পর্যন্ত নবদ্বীপ শহরের সকল বাজারে মাছ মাংশ বিক্রি না করার আবেদন, ও শহর বাসীকে নিরামিষ খাবারও আবেদন জানিয়ে প্রচার করতে দেখা গেছে পৌরসভার তরফে। সব মিলিয়ে দেশের সর্বত্রই যেমন শ্রী কৃষ্ণের দোলযাত্রা হিসেবে রং এর উৎসবে পালিত হবে, সেখানে নদীয়ার নবদ্বীপে ভিন্নভাবে রং এর উৎসবে মহাপ্রভুর জন্মোৎসব পালনেট মাধ্যমে গৌরাঙ্গ ময় হবে তা বলাই বাহুল্য।

About The Author


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Verified by MonsterInsights