রাজেন্দ্র নাথ দত্ত:মুর্শিদাবাদ : নবাবের জেলা মুর্শিদাবাদ ।শহর বেলডাঙায় লোহার বেঞ্চে বসে আছেন শিব-দুর্গা। ভরা চৈত্র মাস। বাংলা বছর শেষ হতে মাত্র ক’টা দিন বাকি। গাজন উৎসব চলে এল বলে। তার আগে গাজনের শিব লোকায়ত দেবতা হিসাবে রাস্তায় নেমেছেন। সপ্তাহের শেষে তীব্র রোদে ডান হাতে ফোন নিয়ে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন। নীল সাদা শিবের গলায় পাক খাওয়ানো রুদ্রাক্ষের মালা। মাথার কালো জটায় মালা পাক খাচ্ছে। জটা থেকে বিষধর সাপ গলা জড়িয়ে রেখেছে। বাঘছাল নেমেছে কাঁধ থেকে পা পর্যন্ত। পাশে বসে রয়েছেন দেবী দুর্গা ওরফে অমিত দাস।
মুড়ি ছোলা খেয়ে সবে বিড়ি ধরিয়েছেন। সেই বিড়ি থেকে আগুন নিয়ে বিড়ি ধরালেন নদিয়ার চাপড়ার শিব ওরফে সুব্রত দাস। সুব্রত দাসের কথায়, “ট্রেন ধরে বেলডাঙা এসেছি। গাজনের সন্ন্যাসীর ব্রত পালন করছি। পথে পথে হেঁটে ভিক্ষা করছি। মাস ভর এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত ঘুরে এই কাজ করছি।” তাঁদের দুই সহকারী আছেন। ঢোল ও চরবরি বাজাচ্ছেন। গাজনের এই শিব এখানে লোকায়ত দেবতা রামেশ্বর ভট্টাচার্যের শিবায়ন কাব্যের শিব যেন। রামেশ্বর ভট্টাচার্যের শিবায়ন কাব্যে, যেখানে শিব তার স্বর্গ ছেড়ে ধূলি ধুসরিত এই মর্ত্যে নেমেছেন বাংলার কৃষি প্রধান অঞ্চলের আর পাঁচটা কৃষকের মতই। ত্রিশূল ভেঙে হয়েছে লাঙলের ফাল লক্ষ্ণীর কাছ থেকে আনা হয়েছে ধান। পার্বতী বা দেবী দুর্গা হয়েছেন কৃষক রমণী। লোক জীবনের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে দেব গাথা। রবীন্দ্রনাথের ভাষায় বলা যায়, মানুষ হয়েছে দেবতা, দেবতা হয়েছে মানুষ।
এই লোকায়ত দেবকথার প্রতিচ্ছবি দেখা যায় গাজনের শিব-দুর্গায়। তাই শিব-দুর্গা এখানে ভিক্ষা করছে শহর থেকে গ্রামে। ভোটের বাজার গরম। ভোট নিয়ে কী ভাবছেন শিব ওরফে সুব্রত দাস। তাঁর কথায়, “সাধারণ সময় আমি গ্রামে গ্রামে ফুচকা বিক্রি করি। পরিশ্রম করে পেট চলে।” তাঁর কথায়, এখনও ভোটের বাজার সে ভাবে শুরু হয়নি। এক মাস পরে বাজার গরম হতে পারে। আপনি ভোট দেন? তাঁর কথায়, “গ্রামের নেতারা বাড়িতে আসেন। তখন ভোট দিতে হয়। তবে পাড়ার মোড়ল যেটা বলে সেটা করি। নিজে থেকে কিছু করি না। কখনও সখনও নিজে ইচ্ছেমত ভোট দিই। পঞ্চায়েতে ভোট ভাল জমে।” ভোট নিয়ে কী বুঝছেন? দুর্গা ওরফে অমিত দাসের কথায়, “১২ মাস খেটে খেতে হয়। যাঁকে ইচ্ছে তাঁকে ভোট দেব। কারও কথা শুনবো না।”