রাজেন্দ্র নাথ দত্ত:মুর্শিদাবাদ:চলছে পবিত্র রমজান মাস। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষেরা দিনভর উপবাস করে সন্ধ্যায় আজান শেষে ইফতার করে সারাদিনের উপবাস ভাঙছেন। মুর্শিদাবাদ জেলায় নবাবি আমলের ইফতার এবং তার খাওয়া দাওয়া ভোজন রসিকদের কাছে বরাবরই এক চর্চার বিষয়। নবাবি আমলে একসময় লালবাগের ইমামবাড়া থেকে রমজান মাসে রোজাদারদের জন্যই ইফতারের জন্য মাটন বিরিয়ানি বিতরণ করা হত। তবে এখন সেই নবাবও নেই, নেই তাঁর রাজত্বও। এখন বিভিন্ন রাজনৈতিক দল বা ছোট ছোট সংগঠনের পক্ষ থেকে যে ইফতারের আয়োজন করা হয় তাতে তন্দুরি রুটি, ছোলার ডাল, মিষ্টি, ফল প্রভৃতি নানা রকমের খাবার থাকে। এর পাশাপাশি মুসলিম ধর্মাবলম্বী বহু বাড়িতে রমজান মাসে রোজার নামাজ শেষে ইফতারের জন্য পাতে থাকে চিকেনের বিভিন্ন পদ ও কাবাব। তবে মুর্শিদাবাদ জেলা সংলগ্ন ঝাড়খণ্ডের পাকুড় এলাকায় পাখিদের মধ্যে ‘অ্যাভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা’র (বার্ড ফ্লু) খবর সুনিশ্চিত হতেই বহু বাড়িতেই চিকেন ঢোকা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। রাজ্য প্রশাসনের নির্দেশে পাকুড় থেকে ১০ কিলোমিটারের মধ্যে থাকা জঙ্গিপুর মহকুমার চারটি ব্লকে বিশেষ নজরদারি শুরু হয়েছে প্রশাসনের তরফ থেকে। ঝাড়খন্ড থেকে মুর্শিদাবাদ জেলায় মুরগি পরিবহন বন্ধ সুনিশ্চিত করার জন্য জঙ্গিপুরের ছ’টি জায়গায় নাকা তল্লাশি চলছে পুলিশের তরফে। সাধারণ মানুষের মধ্যে বার্ড ফ্লু নিয়ে কিছুটা আতঙ্ক থাকায় অনেক বাড়িতে এবং বিভিন্ন সংগঠনের আয়োজন করা ইফতার পার্টিগুলিতে গত কয়েকদিন ধরে চিকেনের পরিবর্তে মাটন বা খাসির মাংস খাওয়ানো শুরু হয়েছে। সূত্রের খবর, গত কয়েকদিনে জঙ্গিপুর মহকুমার বেশ কয়েকটি জায়গায় মুরগির মাংসের দাম কমেছে অন্যদিকে বেড়েছে খাসির মাংসের দাম। দোল উৎসবের পর থেকেই জঙ্গিপুর মহকুমার বিভিন্ন এলাকায় খাসির মাংস ৮০০-৮৫০ কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। অন্যদিকে গোটা মুরগির দাম কেজি প্রতি ১০০ টাকার কাছাকাছিতে নেমে এসেছে। মীর আবু হেনা নামে সুতি এলাকার এক বাসিন্দা জানান, ‘বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে বার্ড ফ্লু খবর দেখার পর কিছুটা আতঙ্ক অবশ্যই রয়েছে। সেই কারণে বাড়িতে এখন আর মুরগির মাংস আনছি না। গত কয়েকদিনে দু-তিনবার খাসির মাংস দিয়ে বিভিন্ন পদ রান্না করে বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে ইফতার করেছি।’মুর্শিদাবাদ বালিয়া প্রেরণা ফাউন্ডেশনের সভাপতি বলেন , ‘আগামী শুক্রবার স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার পক্ষ থেকে খড়গ্রাম ব্লকের প্রায় ১০ হাজার মানুষকে নিয়ে একটি ইফতার পার্টির আয়োজন করেছি। সেখানে সকলকে খাসির মাংস খাওয়ানো হবে।’ তিনি জানান, ‘মাঝেমধ্যে বার্ড ফ্লু খবর আমরা শুনতে পাচ্ছি। এছাড়া অনেক দরিদ্র মানুষ দামের কারণে সারা বছর খাসির মাংস খেতে পারেন না। তাই ইদের আগে সকলের মুখে একটু হাসি ফোটানোর জন্য খাসির মাংস দিয়ে কয়েকটি পদ রান্না করে সকলকে খাওয়ানো হবে।’
