গোপাল বিশ্বাস , নদীয়া- শাস্ত্র অনুসারে জ্যৈষ্ঠমাসের পূর্ণিমা তিথিতে স্বয়ম্ভু মনুর যজ্ঞের প্রভাবে আবির্ভূত হয়েছিলেন প্রভু জগন্নাথ দেবের। সে কারণেই এই তিথিকে জগন্নাথদেবের জন্মদিন হিসেবে পালন করার নির্দেশ দেন স্বয়ং মানুষই। আর চিরাচরিত প্রথা মেনে জগন্নাথ দেবের জন্মদিন উপলক্ষ্যেই অনুষ্ঠিত হয় জগন্নাথ, বলদেব ও সুভদ্রা মহারানীর স্নানযাত্রা উৎসব। এবছর যা ২২শে জুন শনিবার ২০২৪ এ মহাসমারোহে, ও যথাযথ ধর্মীয় মর্যাদার সাথেই ইসকনের শাখাকেন্দ্র রাজাপুর জগন্নাথ মন্দিরে জগন্নাথ, বলদেব ও সুভদ্রা মহারানীর স্নানযাত্রা উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। আর এই স্নানযাত্রা উৎসবের রয়েছে বেশ কিছু রীতি। স্নানযাত্রার আগের সন্ধ্যায় মহাপ্রভু জগন্নাথ, বলদেব, সুভদ্রা, সুদর্শন এবং মদনমোহনের বিগ্রহ শোভাযাত্রা সহকারে স্নানবেদিতে আনা হয়। ভক্তবৃন্দ সকলে বৎসরের একমাত্র এই দিনটিতে স্নানযঙ্গে সামিল হয়ে ভগবান লীলা পুরুষত্তম জগন্নাথদেবের কৃপা লাভ করে। স্নানের পর মহাপ্রভুকে গজবেশে সাজানো হয়। স্নানযাত্রার পর শুরু হয় অনসর।
এ বছর ২১ ও ২২ শে জুন এই দুই দিন ব্যাপী মহাসমারোহে এই উৎসব পালিত হবে। বিনামূল্যে সকলের জন্য প্রসাদের সুবন্দোবস্ত থাকবে। জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে দেশী বিদেশী প্রচুর ভক্ত এই উৎসবে সামিল হয়ে, গঙ্গার জল, ডাব এছাড়াও বিভিন্ন ধরনের ফলের রস দিয়ে তাদের প্রিয় ভগবান জগন্নাথ, বলদেব ও সুভদ্রা মহারানীকে স্নান করিয়ে পরমেশ্বর ভগবান জগন্নাথদেবের কৃপা লাভ করেন। এদিন সকাল থেকেই শুরু হয় বিভিন্ন ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান, একাধারে যেমন চলে বিভিন্ন আাচার অনুষ্ঠান, পাশাপাশি চলে বিশেষ পুজো। এরই সাথে অনুষ্ঠিত হয় ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানেরও। আর এদিনের এই অনুষ্ঠানের পর থেকেই অর্থ্যাৎ ২৩ শে জুন থেকে ৫ ই জুলাই পর্যন্ত রাজাপুরের জগন্নাথ মন্দির বন্ধ থাকবে।ইস্কনের জনসংযোগ আধিকারিক রসিক গৌরাঙ্গ দাস জানান এই একপক্ষ কাল সর্বত্রই প্রভু জগন্নাথ দেবের দ্বার বন্ধ থাকে, কারণ হিসেবে তিনি জানান কথিত আছে স্নানযাত্রার পরে শ্রীজগন্নাথদেব এক পক্ষ কাল দৃশ্যমান থাকেন না তাঁর জ্বর হয়। এ-সবই তার লীলা। সেই সময় তিনি রাজবৈদ্যের অধীনে চিকিৎসিত হয়ে থাকেন। এই পর্বটিকে ‘অনাসর’ বা ‘অনবসর’ বলা হয়। যেহেতু এই সময়ে দারুব্রহ্মকে দেখা যায় না, সেহেতু তার পটচিত্রে পুজো দেন ভক্তরা। লীলা পুরুষত্তম জগন্নাথদেব জগতের নাথ তিনি, তাঁর আবার জ্বর! কথিত আছে জ্বর সারাতে দয়িতাপতিরা ওষুধ, পথ্য অর্থাৎ মিষ্টি রসের পানা বিশেষ পাচন ও নানা ধরনের মিষ্টান্ন ভোগ দেন। রাজবৈদ্যের আয়ুবেদিক পাচন খেয়ে এক পক্ষকালের মধ্যে সুস্থ হয়ে ওঠেন জগন্নাথদেব। এরপর যখন নবমূর্তিতে জগন্নাথদেব নানা বেশভূষায় সুসজ্জিত হয়ে দর্শন দেন তখন সেই উৎসবকে বলা হয় নেত্রোৎসব বা নবযৌবন উৎসব।