ইন্দ্রজিৎ আইচঃ কিছু কিছু ঘটনা এমন ভাবে ঘটে চলে যার কোনো শেষ নেই। যেমন এই নাটকটা ” খনন আদি ” এখানে খুন হয়েছে দু জন। একজন রথীন্দ্রপ্রতাপ সিনহা অন্যজন শহরের বিখ্যাত আইনজীবি ঋষি সেন এর এক মাত্র মেয়ে ভূমিকা। শোনা যায় বা জানা যায় রথীন্দ্র নাকি ভূমিকা কে খুন করেছে। কিন্তু কেন ? আবার দেখুন এই খুনের কিছুদিন বাদে এই নগরের সবচেয়ে প্রভাবশালী ডন রথীন্দ্রপ্রতাপ সিনহা খুন হয়ে গেলেন। ভারী অদ্ভুত ব্যাপার নয় কি??? রথীন্দ্রবাবুর বাড়ি খুব সুরক্ষিত। চারদিকে নিরাপত্তা বলয়। প্রাসাদের নাম মহাকাব্য। এই শহর জুড়ে রথীন্দ্রর পোষা গুন্ডারা অত্যাচার করে। এতকিছুর পরেও এই ক্ষমতাশালী ডন খুন হয়ে গেলো। এই খুনের দায়িত্ব এসে পড়লো এ সি পি এন্টালিজেন্স সমুদ্র বর্মনের কাঁধে। এদিকে শহরের বিখ্যাত উকিল ঋষি সেন একা ২৫ বছর ধরে আইনি লড়াই চালাচ্ছে ভূমিকা খুনের অপরাধী রথীন্দ্রর বিরুদ্ধে। যদিও তদন্ত চলছে খুন টা কে করেছে, কেন করেছে, অথচ রথীন্দ্র র ড্রইং রুমে আইন তৈরি হয় সেই রথীন্দ্র খুন হয়ে গেছে। ঠিক সেই কারণে সমুদ্র বর্মন আইনজীবি ঋষি সেন কে সন্দেহ করে তাকে কিছুদিন গৃহবন্দি করে রাখে। তবুও হাল না ছেড়ে একমাত্র মেয়ে র খুনের জন্য আইনি লড়াই চালিয়ে যায়। জানা যায় রথীন্দ্রর দুটি বিয়ে, দ্বিতীয় স্ত্রী ড: কস্তুরী সিনহার সাথে থাকতেন রথীন্দ্র। তার বিপুল সম্পত্তি, গাড়ি,বাড়ি, ব্যাবসা,কয়লা খাদান, গ্যাং এ সব রথীন্দ্র দিয়ে গেছে ড: কস্তুরী সিনহার ছেলে বিক্রমপ্রতাপ সিনহাকে। এর মধ্যেও আছে সম্পর্ক, সম্পত্তি ভাগাভাগি নিয়ে জটিলতা। পুলিশ অফিসার সমুদ্র বর্মন অনেক সোর্স খাটিয়ে একজন হত্যাকারীকে ধরে কিন্তু সেই হত্যাকারী কে বাঁচাতে আবার নতুন করে আইনি লড়াই শুরু করেন ঋষি সেন… কিন্তু কেন? এই হত্যা রহস্যর তদন্ত কি আজীবন করে যেতে হবে সমুদ্র বর্মনকে? ঋষি সেন আদি কাল ধরে এই দুটি হত্যার খনন চালিয়ে যাবে সত্যের অনুসন্ধানের??
বেলঘড়িয়া এথিক এর নতুন নাটক “খনন আদি” সম্প্রতি মঞ্চস্থ হলো গিরিশ মঞ্চে। নাটক ও প্রয়োগ দেবাশীষ সেনগুপ্ত। আমাদের সমাজ ব্যবস্থারকে নতুন করে এক প্রশ্নের মুখে ঠেলে দেয় এই “খনন আদি” নাটকটি। শহর জুড়ে খুন, আইনি জটিলতা, মুখোশ পরে থাকা মানুষ গুলো একে অপরকে সন্দেহ করে, জটিলতা বাড়তেই থাকে। সুদীর্ঘকাল আইনি লড়াই চলতেই থাকে। কেউ জানে না এর শেষ কোথায়? সুন্দর উপস্থাপনা এই নাটক। এই নাটকে সৌমেন চক্রবর্তী র আলো ও তপন বিশ্বাস এর আবহ এক কথায় দারুন। মদন হালদারের মঞ্চ আরো নৈপুণ্য হওয়া দরকার ছিলো। এই নাটকে কাকলি মজুমদারের পোশাক মন্দ নয়। এবার আসি অভিনয়ের কথায়। (ঋষি সেন) দেবাশীষ সেনগুপ্ত, (ড কস্তুরী সিনহা) কাকলি মজুমদার, (সমুদ্র বর্মন) শান্তুনু দাস এনাদের সকলের অভিনয় বেশ ভালো। পবন ও ভিকি র চরিত্রে তাপস সরকার ও শুভম মিত্র মন্দ নয়। (ভূমিকা) ও (মাহিরা) এসনা সেন এবং সুরঞ্জনা দাস এদের আরো অনুশীলনের প্রয়োজন আছে।
সবমিলিয়ে এই নাটক সমাজ কে অন্য বার্তা দিয়ে যায়। ধন্যবাদ বেলঘড়িয়া এথিক ও নাট্যকার ও নির্দেশক দেবাশীষ সেনগুপ্তকে।