মানুষ প্রকৃত গদ্দারকে চিনে ফেলেছে’, মুর্শিদাবাদে দাঁড়িয়ে অধীরকে নিশানা অভিষেকের


রাজেন্দ্র নাথ দত্ত:মুর্শিদাবাদ : বাংলায় কেন ইন্ডিয়া জোট নয়? মুর্শিদাবাদে প্রচারে গিয়ে এবার অধীর চৌধুরীকে নিশানা করলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। বললেন, ‘মানুষ প্রকৃত গদ্দারকে চিনে ফেলেছে, যাঁরা এখানে বিজেপি শক্তিশালী করছে’। ৭ মে তৃতীয় দফায় ভোট মুর্শিদাবাদ ও জঙ্গিপুর লোকসভা কেন্দ্রে। সঙ্গে মালদা উত্তর ও মালদহ দক্ষিণেও। জঙ্গিপুর লোকসভা কেন্দ্রে এবার তৃণমূল প্রার্থী খলিলুর রহমান। তাঁর সমর্থনের রঘুনাথগঞ্জে প্রচারে সারলেন অভিষেক।
জনসভায় অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘একদিকে মহারাষ্ট্র, দিল্লি এবং অন্য জায়গায় দিদির পাশে বসে বিজেপিকে সরানোর পরিকল্পনা করছেন সোনিয়া গান্ধী আর রাহুল গান্ধী, অন্যদিকে বাংলায় অধীররঞ্জন চৌধুরী বামেদের মহম্মদ সেলিমকে সঙ্গে নিয়ে দল আর আমাকে আক্রমণ করছে! দিদি ও আমার চেয়েছিলাম, বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে আসন সমঝোতা নিয়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়া হোক। রাজ্যগুলিতে আঞ্চলিক দলগুলি শক্তিশালী। বিজেপির বিরুদ্ধে তারা লড়ুক’।অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের আরও বক্তব্য, ‘মুম্বইয়ের বৈঠকে সোনিয়া গান্ধী বিজেপিকে হারাতে দিদিকে একসঙ্গে লড়াই করার বলেছিলেন। আর ঠিক তখনই জলপাইগুড়িতে তৃণমূল ও দিদিকে গালাগালি দিচ্ছিলেন অধীররঞ্জন চৌধুরী! মানুষ প্রকৃত গদ্দারকে চিনে ফেলেছে, যাঁরা এখানে বিজেপিকে শক্তিশালী করছে’।ঘটনাটি ঠিক কী? লোকসভা ভোটে বিজেপির বিরুদ্ধে বিরোধীদের সঙ্গে ইন্ডিয়া জোটে যোগ দিয়েছে তৃণমূল। যে জোটের শরিক কংগ্রেসও। কিন্তু বাংলায় ২ দলের মধ্যে আসন সমঝোতা হয়নি। ৪২ আসনে একাই লড়ছে তৃণমূল।বিস্ফোরক দাবি অভিষেকের! বিজেপির ১০ শীর্ষ নেতৃত্ব তৃণমূলে যোগদানের জন্য মুখিয়ে আছেন। নির্বাচনী জনসভা থেকে বিস্ফোরক দাবি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্য়ায়ের। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “বিজেপির ১০ শীর্ষ নেতা তৃণমূলে যোগ দেওয়ার জন্য লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছেন। একদম সঠিক সময়ে গেট খুলে দেব। আর তারপরই এই বিজেপি এখান থেকে মুছে যাবে।” বিস্ফোরক অভিষেক। এদিন মুর্শিদাবাদে প্রথমে রোড শো করেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় । তারপর যোগ দেন জনসভায়। সেই সভা থেকে অভিষেক তীব্র আক্রমণ করেন বিজেপিকে। চাঁছাছোলা ভাষায় একহাত নেন বিজেপিকে। নাম না করে তোপ দাগেন অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়কেও।জঙ্গিপুর লোকসভা কেন্দ্রে এবার তৃণমূল প্রার্থী খলিলুর রহমান। তাঁর সমর্থনে রঘুনাথগঞ্জে প্রচারে সারেন অভিষেক। অভিষেক বলেন, “বিজেপি একটি দুর্নীতিগ্রস্ত দল। একজন বিচারপতি যিনি ৪ বছর ধরে আমার পিছনে পড়েছিলেন, আজ তিনি বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন। দুর্ভাগ্য এটাই যে, বিচারপতিরাও এখন দুর্নীতিগ্রস্ত একটি দলে যোগদান করছেন। বিজেপি আমাকে নানাভাবে হেনস্থা করেছে। আমার পিছনে ইডি-সিবিআই লেলিয়ে দিয়েছে। আমাকে দিল্লি ডেকে নিয়ে গিয়েছে। এমনকি তারা আমার পরিবারকে পর্যন্ত ছাড়েনি। আমার হেলিকপ্টারে তল্লাশি চালিয়েছে। আয়কর দফতর আমার কপ্টার আটক করারও পর্যন্ত চেষ্টা চালিয়েছিল যাতে আমি কোনও নির্বাচনী সভায় যেতে না পারি।”শুধু তাই নয়, “একইসঙ্গে অভিষেক তাঁকে খুনের প্রসঙ্গেও এই প্রথমবার মুখ খোলেন। অভিষেক বলেন, ২ দিন আগে ওরা আমাকে খুনের পর্যন্ত চেষ্টা করে। তবে সঠিক সময়ে কলকাতা পুলিসের হস্তক্ষেপে অভিযুক্ত ধরা পড়েছে। ওদের ছক বানচাল হয়ে গিয়েছে। তবে আমি আমার জীবন নিয়ে ভাবি না। আমি মানুষের জন্য কাজ করে যাবে। মানুষ যদি আমার পাশে থাকে, তবে কোনও অশুভ শক্তি আমার কোনও ক্ষতি করতে পারবে না।”বাংলায় কংগ্রেসের সঙ্গে জোট না হওয়ার জন্য অধীর চৌধুরিকেই দুষলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক ব্যানার্জি। বুধবার মুর্শিদাবাদ জেলার রঘুনাথগঞ্জে জনসভা ছিল অভিষেকের। জঙ্গিপুর লোকসভা কেন্দ্রে তৃণমূল প্রার্থী খলিলুর রহমানের সমর্থনে জনসভায় অভিষেক বলেন, ‘‌কংগ্রেস জোট নিয়ে আলোচনা ঝুলিয়ে রেখেছিল। একদিকে দিল্লিতে বলা হচ্ছিল জোটের কথা। অন্যদিকে বাংলায় অধীর চৌধুরি বৈঠক করছিলেন মহম্মদ সেলিমের সঙ্গে।’‌ এরপরই অভিষেকের কটাক্ষ, ‘‌বাংলায় বিজেপির বি টিম হিসেবে কাজ করছে কংগ্রেস ও সিপিএম।’‌ পাশাপাশি তাঁর দাবি, ‘‌বিজেপির সঙ্গে লড়াই করছে একমাত্র তৃণমূল।’‌ দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি নিয়ে অভিষেক এদিন কেন্দ্রের বিজেপি সরকারকে যেমন আক্রমণ করেছেন। তেমনই বলেছেন, ‘‌লক্ষ্মীর ভান্ডার বন্ধ করার কথা বলছে এক বিজেপি নেত্রী।’‌ এরপরই সভায় একটি অডিও শোনান অভিষেক। পাশাপাশি বলেন, ‘‌১০০ দিনের টাকা আসছে না। রাজ্য সরকার বারবার কেন্দ্রকে জানিয়েছে টাকা দিন। কিন্তু এই বিষয়ে কংগ্রেস, সিপিএম চুপ ছিল। অধীর চৌধুরি কোনও চিঠি লেখেননি কেন্দ্রকে।’‌ অধীরকে ‘‌ব্রাঞ্চ ম্যানেজার’‌ হিসেবেও কটাক্ষ করেন অভিষেক। সিপিএম–কংগ্রেসের সঙ্গে বিজেপির যোগসাজশ প্রসঙ্গে নাম না করে অধীরকে তোপ দেগে অভিষেক বলেন, ‘‌উনি বারবার বলছেন বহরমপুরে এসে লড়াই করুন। একবার বলুন না ডায়মন্ডহারবারে আমার বিরুদ্ধে লড়তে।’‌ এক্ষেত্রে নাম না করে শুভেন্দু প্রসঙ্গ তোলেন। সিপিএমের মহম্মদ সেলিমকে ‘‌পরিযায়ী’‌ নেতা বলেও কটাক্ষ করেন অভিষেক। জনসভার পর এদিন মুর্শিদাবাদ লোকসভা কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী আবু তাহের খানের সমর্থনে রোড শো করার কথা রয়েছে অভিষেকের।

About The Author


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Verified by MonsterInsights