রাজেন্দ্র নাথ দত্ত : মুর্শিদাবাদ : ভোট দেবেন কোথায়/ জোড়া বলদ যেথায়’ বা ‘জোড়া বলদের দুধ নেই/ কংগ্রেসেরও ভোট নেই’ – ভোট মানেই এমনই হরেক স্লোগান লেখা দেওয়াল ছিল বাংলার পরিচিত ছবি। ভোট এলেই এই বাংলায় চাহিদা বেড়ে যেত দেওয়াল লিখন শিল্পীদের। কার্যত তাঁদের ধরে টানাটানি পড়ে যেত সর্বত্র। কিন্তু সেই রামও নেই, আর অযোধ্যাও নেই। আধুনিক ফ্লেক্স, ব্যানারের দাপটে ক্রমশই হারিয়ে যাচ্ছে ভোটের দেওয়াল লিখনের সংস্কৃতি। তাই চাহিদা কমছে এই শিল্পীদের।একটা সময় ছিল যখন ভোট প্রচারের একমাত্র মাধ্যম হিসেবে পরিচিত ছিল দেওয়াল লিখন। তবে সময়ের নিয়মে বহুল প্রচলিত এই প্রচার মাধ্যম বর্তমানে আর খুব একটা চোখে পড়ে না। আধুনিকতার যুগে এই মাধ্যমের বিকল্প হিসেবে বাজার ছেয়েছে ব্যানার, পোস্টার, ফ্লেক্সে। তবে আজও বহু শিল্পীরা এই শিল্পকে আঁকড়ে বেঁচে থাকার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন প্রতিনিয়ত। সারা বছর এই শিল্পীদের খুব একটা কাজ থাকে না। তবে এই শিল্পীরা ভোট আসার অপেক্ষায় থাকেন। যাতে কিছুটা মুনাফার মুখ দেখতে পারেন। কিন্তু এবার লোকসভা নির্বাচনের আগে তাঁদের চাহিদা প্রায় নেই বললেই চলে।দেওয়াল লিখন শিল্পী বিশু মণ্ডল জানান, দীর্ঘ ১২ থেকে ১৩ বছর আগে থেকে দেওয়াল লিখন শিল্পী হিসেবে কাজ শুরু করেছিলেন। তখন ভোটের সময় নাওয়া-খাওয়ার সময় পাওয়া যেত না। কিন্তু এখন ছবিটা সম্পূর্ণ বদলে গিয়েছে। এবারের লোকসভা নির্বাচনের আগে আগাম বুকিং প্রায় নেই বললেই চলে।আরেক দেওয়াল লিখন শিল্পী প্রদীপ সরকার জানান, দীর্ঘ ২০ বছরের বেশি সময় ধরে এই কাজের সঙ্গে যুক্ত। এই কাজ করেই সংসার প্রতিপালন করেনৃ তবে বর্তমানে এই কাজের যা অবস্থা তাতে সংসার চালাতে রীতিমত কালঘাম ছুটে যায়। এই পরিস্থিতিতে আগামী দিনে কীভাবে তাঁরা ঘুরে দাঁড়াবেন সেটাই ভাবছেন এই শিল্পীরা। মাত্র কয়েকদিন পরেই নির্বাচন। দিকে দিকে চলছে লোকসভা নির্বাচনের প্রস্তুতি। কোথাও দেওয়াল লিখন, কোথাও আবার মিছিল। এভাবেই নির্বাচনের প্রস্তুতি সারছে সমস্ত রাজনৈতিক দল।নির্বাচনের আগে মন খারাপ দেওয়াল লিখন শিল্পীদের। বরাত তেমন পাচ্ছেন না শিল্পীরা। কিংবা বরাত পেলেও রং সহ অন্যান্য জিনিসের অস্বাভাবিক দাম বৃদ্ধির কারণে, সে অর্থে তাদের লাভ হচ্ছে না। পাশাপাশি প্রচন্ড গরমের কারণে সকালবেলা কাজ হলেও বেলা দশটার পর কাজ করতে পারছেন না শিল্পীরা। স্বাভাবিকভাবে নানান সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন তারা।প্রসঙ্গত ভোট এলেই ডাক পান দেওয়াল লিখন শিল্পীরা। প্রার্থীর নাম লেখা, প্রতীক আঁকা সহ নানান কাজে ব্যস্ত থাকতেন এই শিল্পীরা। তবে বর্তমানে বাজারে ফ্লেক্স ও ব্যানার এর মধ্য দিয়ে প্রস্তুতি সারছেন রাজনৈতিক দলের নেতা-নেত্রীরা। ফলত, কদর কমছে শিল্পীদের। এছাড়াও বর্তমানে লোকের বাড়ির দেওয়াল পাচ্ছেন না রাজনৈতিক দল। ফলত ভোট এলেও তেমন একটা সাড়া পাচ্ছেন না শিল্পীরা।শিল্পীদের বক্তব্য ভোট এলে কাজ বাড়ে তাদের। তবে বর্তমানে ফ্লেক্স ব্যানারের যুগে সেই ডাকও পাচ্ছেন না তারা। যে কটা পাচ্ছেন তাতে লাভ হচ্ছে না। সময়ের সাথে সাথে হারিয়ে যাচ্ছে হাতে লেখা প্রচার দখল নিচ্ছে ডিজিটালাইজেশন। চাহিদা কম শিল্পীদের।