কেউ বলছে মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে এলাম,তো কেউ বলছে আর কোন দিন ট্রেনে উঠবো না! বাড়ি ফিরে আতংকের সাথেই বলেন কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসের যাত্রীরা।


গোপাল বিশ্বাস,নদীয়া- বিভীষিকাময় কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস দূর্ঘটনা থেকে বাড়ী ফিরে এখনো সেই ভয়াবহ সময়ের আতংক পিছু ছাড়ছে না কোন মতেই। সেই সময়ের কথা মনে পরলেই এখনো ঠান্ডা হয়ে আসছে হাত পা! কেউ বলছেন সামনে যেন মৃত্যুকে দাড়িয়ে থাকতে দেখেছি! তো কেও বলছে আর কোন দিন ট্রেনে উঠবো না। সোমবারে বিভীষিকাময় কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস থেকে বাড়ি ফিরে এমনটাই জানান নদীয়ার শান্তিপুর ও নবদ্বীপের ঐ দূর্ঘটনার কবলে পড়া ট্রেনের যাত্রীরা। নবদ্বীপ শহরের চার(৪) নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা উত্তম সাহা বয়স আনুমানিক ৪৩, তার স্ত্রী পম্পি সাহা ও তাদের সারে চার বছরের একমাত্র সন্তান আয়ুস সাহা, ও উত্তম সাহার শশুর বাড়ির বেশ কিছু সদস্যরা মিলে গত ইংরেজির ৯-ই জুন রবিবার ছুটি কাটাতে আগরতলায় যান ও পরিবারের সাথে ছুটি কাটিয়ে ১৬ই জুন কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস এ করে বাড়ি ফিরেছিলেন।সেই ট্রেনটিই পরে দূর্ঘটনার কবলে। বিভীষিকাময় দূর্ঘটনার অনুভূতির কথা বলতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পরেন পম্পি সাহা, তিনি জানান সেই সময় আমি বাথরুমে ছিলাম ছেলে বাইরে ছিলো, হঠাৎ করে সব যেন তোলপাড় হয়ে যায়, চোখে মুখে আতংকের ছাপ, দু চোখে জল নিয়ে তিনি জানান কপালের জোরেই একমাত্র সন্তান ও পরিবার কে নিয়ে বেঁচে ফিরেছি। আমাদের কিছু হয়েগেলে সন্তানের কি হতো, আর যদি সন্তানের কিছু হয়ে যেতো আমরাতো শেষ হয়েই যেতাম। চোখে মুখে আতংকের ছাপ, মাঝে মাঝেই শরীর কেপে উঠছে সেই সময়ের কথা,মনে পড়লেই, এমনটাই বলেন উত্তম সাহা ও তার শাশুড়ী শহরের ২৪নং ওয়ার্ডের প্রফুল্লনগরের বাসিন্দা বাসন্তী দেবনাথ। তারা প্রত্যেকেই জানান সেই মর্মান্তিক দূর্ঘটনার সময়ের কথা। পরিবারের দাবী সামগ্রিক ঘটনায় খোয়া গেছে তাদের ব্যাগ যেখনে তাদের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সহ নগদ টাকাও ছিলো। পাশাপাশি ছোট্ট শিশু আয়ুস সহ পরিবারের সকলেরই কমবেশি লেগেছে, কারও হাতে, তো কারও পায়ে সকলেই কমবেশি আহত হয়েছেন। আর মঙ্গলবার দূর্ঘটনার কবল থেকে ফিরে আসা পরিবারসাথে দেখ করতে আসেন নবদ্বীপের চব্বিশ (২৪)নং ওয়ার্ডডের কাউন্সিলর পারুল দেবনাথ, কথা বলেন পরিবারের সাথে ও সবরকম সাহায্যের আশ্বাস দেন তিনি। প্রায় একই কথা বলেন নদীয়ার শান্তিপুরের থানার মোড়ের বাসিন্দা তপন বিশ্বাস ও তার স্ত্রী কমলা বিশ্বাস। তারা গিয়েছিলেন ত্রিপুরায় তাঁদের মেয়ের বাড়ি। সেখান থেকে আসার সময় এই দুর্ঘটনার কবলে পড়েন তারা। তবে সেখান থেকে আসার পর এখনো পর্যন্ত আতঙ্কের রেশ নিয়ে রীতিমতো ভয়েই দিন কাটাচ্ছেন তপন বাবু এবং তার স্ত্রী। তবে সোমবারের সেই ভয়ানক অভিজ্ঞতার কথা বলতে গিয়ে এখনও শিউরে উঠছেন তপন বাবু।

তিনি জানাচ্ছেন কাল হঠাৎ সকালবেলায় ট্রেনে বাথরুমে গিয়েছিলেন। তখনই হঠাৎ পেছনদিকে সজোরে ধাক্কা লাগার ফলে ঝাঁকুনি অনুভব হয়। ট্রেনের বগিতে তিনি ছিলেন এসি কম্পার্টমেন্টের বি ওয়ান কোচের একত্রিশ এবং ৩২ নম্বর সিটে। তবে এই ঘটনা ঘটার পরই রেলে উপস্থিত সাফাই কর্মীদের কে তিনি জানান বাইরে কি হয়েছে দেখতে? সাফাই কর্মীর বাইরে তাকিয়ে চক্ষু চড়ক গাছ হয়ে বলেন,ট্রেন থেকে চলে যান ভয়াবহ দুর্ঘটনায় রেলের সমস্ত বগি উল্টে গেছে।সেই সময় প্রাণ বাঁচাতে কোন রকমে তার স্ত্রীকে নিয়ে ট্রেন থেকে নেমে বেরিয়ে পড়ে তপন বাবু।এরপর রেলের তরফ থেকে দেওয়া অ্যাম্বুলেন্সে করে পৌঁছন নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশন। তারপর সন্ধ্যের দিকে তিস্তা তোর্সা ট্রেন দেয়া হয় আহতদের এবং ট্রেনে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের কে একসাথে নিয়ে আসার জন্য।আর সেই ট্রেনে সেই অন্ধকার সময়ের স্মৃতি মাথায় নিয়ে বাড়ি ফেরেন তপন বাবু এবং তার স্ত্রী। তবে রেল কর্তৃপক্ষ আহত ব্যক্তিদেরকে যে ট্রেন দিয়েছিল সেখানে কোনরকম খাবারের ব্যবস্থা করেনি এমনকি প্রাথমিক চিকিৎসার ও কোনরকম ব্যবস্থা করেনি বলে গুরুতর অভিযোগ তুলেছেন ঘটনায় আহত তপন বাবু। অপরদিকে তার স্ত্রী কমলা দেবী জানান তিনি বসেছিলেন আর তারপরেই ভয়ানক শব্দে রীতিমতো কেঁপে ওঠে কম্পার্টমেন্ট। তারপরেই হঠাৎ করে চোখের নিমেষে কি যে হয়ে গেল কিছুই বুঝতে পারলেন না। তারপর তার স্বামী চিৎকার করে ডাকতে তিনি কোন রকমে প্রাণ বাঁচাতে ট্রেন থেকে বেরিয়ে আসেন। তবে এখনো কাল সকালের সেই অন্ধকার সময়ের কথা মাথায় আসলে রীতিমতো শিউরে উঠছেন তিনি। তবে বর্তমানে তারা দুজনাই কমবেশি আহত হয়েছেন এবং পরবর্তীতে শান্তিপুর হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য যাবেন বলেও সংবাদ মাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে জানিয়েছেন।তবে রেলের তরফে যে অব্যবস্থা তার দিকেও প্রশ্ন ছুড়ে দিয়েছে তপন বাবু এবং তার স্ত্রী। এই দম্পতির বাড়ি ফিরে আসার পর শান্তিপুর থানার তরফে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে এবং তাদের চিকিৎসার জন্য যথাযথ সাহায্য করবে বলে পুলিশ সূত্রে খবর পাওয়া গেছে।

About The Author


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Verified by MonsterInsights