কারাবন্দি নজরুলের সেলটি সংরক্ষণ করার দাবি তুললেন বহরমপুরবাসীরা


রাজেন্দ্র নাথ দত্ত : মুর্শিদাবাদ : বিদ্রোহী কবি কাজি নজরুল ইসলামের সঙ্গে মুর্শিদাবাদের সম্পর্ক অত্যন্ত গভীর। বহরমপুর ডিস্ট্রিক্ট জেলে বন্দি হিসেবে ঠাঁই পেয়েছিলেন কবি। প্রায় ছ’মাস তিনি এখানে কারাবন্দি ছিলেন। বহরমপুর জেলে বসে বেশ কয়েকটি কবিতা লিখেছিলেন নজরুল। তাঁর সেই সৃষ্টিগুলি সে সময়ে আলোড়ন ফেলে দিয়েছিল। যে জেলে নজরুল বন্দি ছিলেন তা এখন বহরমপুর মানসিক হাসপাতাল। নজরুলের স্মৃতিবিজড়িত সেই বন্দিশালা এখন অবহেলিত অবস্থায় পড়ে আছে। সেটিকে সংস্কার করে সংরক্ষণ করা দরকার বলে দাবি করছেন শহরের বিশিষ্টরা। দু’ দিন পরেই নজরুলের জন্মদিবস। তার আগে বহরমপুরে নজরুলের সৃষ্টি নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। ‘নজরুলের সৃষ্টিতে বিপ্লবের বারুদ’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় উঠে এল নজরুলের জীবনের অজানা কথা। ‘কাব্য ও কথা’ সংস্থার পক্ষে থেকে বহরমপুরের ইন্দ্রপ্রস্থ এলাকার একটি অনুষ্ঠানগৃহে ওই আলোচনা সভায় অংশ নিয়েছিলেন বিশিষ্টরা।
নজরুলের ব্যক্তি জীবনে রোমান্টিসিজম ও তার দ্বন্দ্ব নিয়ে আলোচনা করেন তাঁরা। নজরুলের বাংলাদেশ যাওয়া, সে বিষয়ে রাজনৈতিক বিতর্ক ও কবির নাগরিকত্ব পরিবর্তনের বিষয়টির উঠে আসে আলোচনায়। নজরুলকে নিষিদ্ধ করার আইনি এবং সামাজিক প্রেক্ষাপটও উঠে আসে আলোচনায়। জানা যায় অনেক অজানা কথা। বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মানবেন্দ্রনাথ সাহা, প্রাবন্ধিক মইনুল হাসান, গবেষক ও প্রাবন্ধিক সায়ন্তন মজুমদার, বাংলাদেশের অধ্যাপক আকমল হোসেন, পাঁচথুপী কলেজের অধ্যাপক শৈবাল রায় আলোচনায় অংশ নেন। বহরমপুরের বাসিন্দারা এই আলোচনা শুনে সমৃদ্ধ হন।
বরাবর নজরুলের ধারালো লেখায় শাণিত হতো বিদ্রোহের ভাষা। ‘আনন্দময়ীর আগমনে’ কবিতার জন্য নজরুলের নামে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়। অবিভক্ত বাংলার কুমিল্লা থেকে ১৯২২ সালে গ্রেপ্তার করা হয় তাঁকে। কলকাতায় নিয়ে এসে রাজদ্রোহে অভিযুক্ত করা হয় এবং বিচার প্রক্রিয়া শুরু হয়। ১৯২৩ সালের জানুয়ারি মাসের মাঝামাঝি ওই মামলায় নজরুলকে এক বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়। ওই সময়ে নজরুলকে প্রেসিডেন্সি জেল থেকে আলিপুর সেন্ট্রাল জেলে পাঠানো হয়। তারপর সেখান থেকে হুগলি জেল হয়ে কবিকে বহরমপুর ডিস্ট্রিক্ট জেলে নিয়ে আসা হয়। ওখানকার দোতলার একটি ঘরে নজরুল ওই বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত বন্দি হিসেবে ছিলেন। কিন্তু এই মানসিক হাসপাতালের ভিতরে এখন সাধারণের প্রবেশাধিকার নেই। বহরমপুরবাসী তথা মুর্শিদাবাদের সাধারণ মানুষ চাইছে, ওই হাসপাতালের দোতলার ঘরটি আলাদা করে সংরক্ষণ করে সাধারণ মানুষের দেখার জন্য খুলে দেওয়া হোক।

About The Author


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Verified by MonsterInsights