রাজেন্দ্র নাথ দত্ত:মুর্শিদাবাদ: দূর্গাপুজো থেকে বাড়তে শুরু করে আনাজের চাহিদা। জেলার আনাজ চাষিদের মতে, বার বার দুর্যোগের জেরে পুজোর মরসুমে এ বার মিলবে না ভাল মানের আনাজ। চাহিদার তুলনায় জোগান কমে যাওয়ায় দামে আগুন লাগার আশঙ্কাও রয়েছে। আলুর দাম কয়েক সপ্তাহ ধরে একই ছিল। চলতি সপ্তাহে মুর্শিদাবাদ জেলার কোনও কোনও বাজারে কেজিতে ২ টাকা করে দাম বেড়েছে বলে দাবি ক্রেতাদের।কান্দী শহরের বাজারগুলিতে আনাজের দাম শুনে ক্রেতাদের চোখ কপালে উঠছে। বিশ্বকর্মা পুজোর আগের তুলনায় আনাজের দাম বুধবার অন্তত ১৫ শতাংশ বেড়েছে। ওই সময়ে পটলের দাম ছিল ৪০ টাকা প্রতি কেজি। বুধবার দাম ছিল ৬০ টাকা। ৩০ টাকার ঝিঙে বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকায়। লঙ্কা ৮০ টাকা থেকে বেড়ে ১৫০ টাকা হয়েছে। কয়েক দিন আগেও উচ্ছের দাম ছিল ৪০ টাকা। এ দিন হয়েছে ৮০ টাকা। সবচেয়ে বেশি দাম বেড়েছে বেগুনের। ৩০-৪০ টাকার বেগুন বিভিন্ন বাজারে ৬০-৮০ টাকা প্রতি কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। বাঁধাকপির দাম এখন কেজি প্রতি ৪০-৪৫ টাকা। একটি ফুলকপির দাম ৪০-৫০ টাকা। ক্যাপসিকাম ১৫০ টাকা, ওল ৭০-৮০ টাকা, ভেন্ডি ৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে। দাম একই রয়েছে শসা ও পেঁপের।কান্দী বাজারে গত সপ্তাহে পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছিল ৫০ টাকা প্রতি কেজিতে। এ দিন দাম ছিল ৬০ টাকা। রসুন ৩০০-৩২০ টাকা কেজি থেকে বেড়ে ৪০০ টাকা হয়েছে। আনাজ কারবারিদের দাবি, বেলডাঙা-সহ জেলার কয়েকটি জায়গার পেঁয়াজ শেষ হয়ে যাওয়ায় দাম বাড়ছে। জেলায় রসুনের চাষ কম হয়। ভিন্‌ রাজ্য থেকে রসুন আমদানি হয় জেলায়। জোগান কমায় রসুনের দাম চড়ছে বলে মনে করছেন তাঁরা। তবে আদার দাম তুলনায় কম।কৃষি বিপণন দফতের দাবি, পুজোর আগে টানা বৃষ্টিই আনাজের দামবৃদ্ধির মূল কারণ। অতিবৃষ্টিতে মাঠেই নষ্ট হয়েছে আনাজ। জলস্তর বৃদ্ধি ও ভাগীরথীর জল ঢুকে জেলায় প্রায় ৩৫০০ হেক্টর আনাজ চাষ ক্ষতির মুখে পড়েছে। জেলা টাস্ক ফোর্সের এক সদস্যের দাবি, “কিছু অসাধু ব্যবসায়ী এই সুযোগে দাম বাড়িয়ে মুনাফা লুটছে।” আলু ব্যবসায়ী সমিতির দাবি, জ্যোতি আলুর দাম ২৯-৩০ টাকার বেশি হওয়া উচিত নয়। কিন্তু ২ টাকা দাম বেড়ে গিয়েছে। বিক্রেতারা জানাচ্ছেন, ভিন‌্ রাজ্য থেকে আসা টোম্যাটো, ক্যাপসিকামেরও দাম বেড়েছে। ভিন‌্ রাজ্যে বন্যায় ট্রাক আটকে থাকায় ওই সব আনাজের জোগান কমেছিল। জেলা প্রশাসনের এক কর্তা বলেন, “কৃষি বিপণন দফতর নজর রাখছে। আমাদের টাস্ক ফোর্সকেও বাজার ঘুরে দেখতে বলা হয়েছে।”
পাইকারি বাজারগুলিতে খোঁজ নিয়ে জানা গিয়েছে, কোথাও আনাজের জোগান কমেছে স্বাভাবিকের থেকে ৭০-৮০ শতাংশ। পাইকারি বাজারগুলিতে মিলছে না ফুলকপি, মুলো। পাইকারি বাজারগুলিতে ভিড় জমে ভিন্‌ রাজ্য থেকে আসা ফড়েদের। জোগান কমায় তাঁদের দেখা মিলছে না। ডোমকল শহরের বাসিন্দা আলম সেখ বলেন, ‘‘ভাল মানের আনাজ মিলছে না। যতটা সম্ভব কম আনাজ কিনতে হচ্ছে।’
চাষিদের দাবি, মাঠের যা পরিস্থিতি, তাতে আনাজের জোগান পুজোয় তেমন বাড়বে না। আনাজ চাষি আনিসুর রহমান বলেন, ‘‘মহালয়ার পরে বাড়ে আনাজের চাহিদা। জগদ্ধাত্রী পুজো পর্যন্ত ভাল চাহিদা থাকে। ভাল দাম পাওয়ার আশায় প্রায় ১৫ হাজার টাকা খরচ করে ফুলকপি চাষ করেছিলাম। দুর্যোগে কপি নষ্ট হয়ে গিয়েছে।’’ আনাজ চাষিরা জানিয়েছেন, এখনও বেশ কিছু নিচু জমিতে জল জমে রয়েছে। নষ্ট হয়েছে আনাজের মাচা। আর এক চাষি গোপাল মণ্ডল বলেন, ‘‘জমির বেশির ভাগ গাছ নষ্ট হয়ে গিয়েছে। অনেক গাছ জমিতে ঝিমিয়ে পড়েছে। ফলে বেগুন, কাঁকরোল, ভেন্ডি, ঝিঙের ফলন তলানিতে এসে ঠেকেছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে অন্তত দেড় মাস লাগবে। ’’

Thank you for reading this post, don't forget to subscribe!

About The Author


Enable Notifications OK No thanks
Verified by MonsterInsights