বালুরঘাটের শতাব্দী প্রাচীন শ্রী শ্রী বুড়াকালী মাতার দীপান্বিতা অমাবস্যার পুজো প্রস্তুতি চলছে জোর কদমে

59be9e34-311a-4ca9-bedf-fc96557c1f6e

দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার শতাব্দী প্রাচীন কালী পুজোগুলোর মধ্যে অন্যতম হল বালুরঘাট তহবাজার এলাকার বুড়াকালী মাতার মন্দিরের কালী পুজো। প্রতিবছরের মতো এবছরও দীপান্বিতা অমাবস্যায় বালুরঘাটের বুড়াকালী মাতার পুজোর প্রস্তুতি চলছে জোর কদমে। কয়েকশো বছর আগে বর্তমান বালুরঘাট বুড়াকালী মাতার মন্দিরের পাশ দিয়ে আত্রেয়ী নদী বইতো। মন্দির সহ পুরো এলাকাটা ঘন জঙ্গল ছিল। শতাব্দী প্রাচীন এই পুজোর সঠিক বয়স কত তা কেউ বলতে পারে না। আত্রেয়ী নদীর ধারে এক সময় নিজে থেকেই ভেসে ওঠে বুড়াকালী মাতার বিগ্রহ। এক তান্ত্রিক সেই সময় ওই বুড়াকালী মাতার বিগ্রহকে তুলে নিয়ে এসে পুজো শুরু করেন। তারপর থেকেই বুড়াকালী মাতার নিত্যপুজো শুরু হয়। সন্ধ্যের পর অপরূপ ফুলের সুগন্ধি পাওয়া যেত ওই মন্দির এলাকা থেকে। সেইসময় মন্দির থেকে কয়েক কিলোমিটার এলাকা পর্যন্ত কোন জনবসতি ছিল না, সন্ধ্যায় বুড়াকালী মাতার নুপুরের আওয়াজ শোনা যেত। বর্তমানে বুড়াকালী মন্দির থেকে অনেকটা পশ্চিমে সরে গেছে আত্রেয়ী নদী। একটা সময় নাটোরের রানী ভবানী বজরায় করে এসে আত্রেয়ী নদী থেকে জল নিয়ে এই মন্দিরে পুজো দিয়ে আবার ফিরে যেতেন নাটোরে, রানী রাসমণি একবার দীপান্বিতা অমাবস্যায় এই মায়ের পুজো দিতে এসেছিলেন। অনেক ভক্তই বুড়াকালী মাতার মন্দিরকে সতীর একান্ন পীঠের এক পীঠ বলে মনে করেন, তবে এর সঠিক ও উপযুক্ত প্রমাণ এখনও পাওয়া যায়নি। প্রথম দিকে টিনের ঘেরা দেওয়া মন্দিরে বুড়াকালী মাতার পুজো শুরু হয়। বর্তমানে বিশাল আকার মন্দিরের পুজিত হন বুড়াকালী মাতা।

Thank you for reading this post, don't forget to subscribe!

প্রতি বছর দীপান্বিতা অমাবস্যার কালীপূজা উপলক্ষ্যে মন্দিরে আসার রাস্তা আলোকসজ্জায় ভরিয়ে তোলা হয়। চিরাচরিত নিয়ম ও রীতি বজায় রেখেই অত্যন্ত নিষ্ঠা ও ভক্তি সহকারে এই মায়ের পুজো হয়ে আসছে। শতাব্দী প্রাচীন বুড়াকালী মাতার পুজোকে কেন্দ্র করে দিনের পর দিন ভক্তদের ভীড় আরো বাড়ছে। প্রতিবছরই কার্ত্তিক মাসের দীপান্বিতা অমাবস্যায় কালীপুজোর দিন সকাল থেকেই বুড়াকালী মাতার মন্দিরে ভক্তদের ঢল নামে এবং সন্ধ্যার পর থেকেই বুড়াকালী মাতার মন্দিরে পুজো দেওয়ার জন্য ভক্তদের ভিড় আরো বাড়তে থাকে। প্রতিবছরই কালী পুজোতে জেলা পুলিশ প্রশাসন বুড়াকালীর পুজোতে যথেষ্ট সহযোগিতা করে থাকে। কালী পুজোর দিন মন্দিরে প্রচুর অন্ন ভোগের হাঁড়ি পড়ে। পুজোতে এখনও পাঁঠা বলি ও বোয়াল মাছ ভোগ দেওয়া হয়। আগে ২০ কিলো ওজনেরও বোয়াল মাছ ভোগ দেওয়া হত। এই পুজোকে ঘিরে শুধুমাত্র দক্ষিণ দিনাজপুর জেলাবাসীই নয় পাশের জেলা উত্তর দিনাজপুর ও মালদা জেলা থেকেও প্রচুর ভক্ত বা দর্শনার্থী আসে। দীপান্বিতা অমাবস্যায় কালীপুজোর পরেরদিন সকালে বালুরঘাট শ্রী শ্রী বুড়াকালী মাতা পূজা সমিতির পক্ষ থেকে মা বুড়াকালী মাতার উদ্দেশ্যে নিবেদিত খিচুড়ি ভোগ ভক্তদের দেওয়া হয়।

প্রতি সপ্তাহে মঙ্গলবার ও শনিবার দুপুরে খিচুড়ি ভোগ এবং বাকি অন্যান্য দিন দুপুরে অন্নভোগ হয়। সারাবছর বালুরঘাট শ্রী শ্রী বুড়াকালী মাতা পূজা সমিতি বুড়াকালী মায়ের নিত্যপুজো পরিচালনা করে। বুড়াকালী মাতার মন্দিরে বুড়াকালী মাতার মন্দিরের পাশাপাশি শীতলা মাতা ও শিব ঠাকুরের মন্দির আছে। চৈত্র সংক্রান্তির দিন দুপুরে শীতলা পুজো রাতে বালুরঘাটে আত্রেয়ী নদীর তীরবর্তী কংগ্রেস ঘাটে মাশানকালীর মন্দিরে পাঁঠা বলি সহ মাশানকালীর পুজোর পর বুড়াকালী মায়ের বাৎসরিক পুজো শুরু হয়। সারাবছরই মা বুড়াকালী অত্যন্ত নিয়ম ও নিষ্ঠা সহকারে নিত্য পুজিত হন। ভক্তদের অগাধ বিশ্বাস বুড়াকালী মাতার উপর, বুড়াকালী মাতার বিষয়ে এমনটাই জানালেন বুড়াকালী মাতা পূজা সমিতির সম্পাদক অমিত মহন্ত।

About The Author


Enable Notifications OK No thanks
Verified by MonsterInsights