গুরু পূর্ণিমায় ঘর ঘর পূজা প্রেমের বাবা ঠাকুরের: বাওয়ালীতে গড়ে উঠছে ‘গুপ্ত বৃন্দাবন’


গুরু পূর্ণিমার পুণ্যতিথিতে দক্ষিণ চব্বিশ পরগণার বাওয়ালী গ্রামে দেখা গেল এক অভূতপূর্ব দৃশ্য। ঘরেঘরে পূজিত হচ্ছেন এক তরুণ সন্ন্যাসী প্রেম ঠাকুর দাস মহারাজ, যিনি এখন পরিচিত ‘প্রেমের বাবা ঠাকুর’ নামে। যদিও বর্তমানে তিনি রয়েছেন বৃন্দাবন ধামে, কিন্তু তাঁর আধ্যাত্মিক প্রভাব ছড়িয়ে পড়েছে গ্রামের প্রতিটি ঘরে, প্রতিটি প্রাণে। বাওয়ালী গ্রামের প্রাচীন ইতিহাসে এই রকম আধ্যাত্মিক আন্দোলন বিরল। অথচ আজ সেই গ্রামকে নতুন রূপে গড়ে তোলার প্রয়াস চালাচ্ছেন গ্রামেরই সন্তান অমিত দাস, যিনি এখন ‘প্রেম ঠাকুর দাস মহারাজ’। বৈদিক সংস্কৃতি ও গৌড়ীয় বৈষ্ণব ঐতিহ্যের সংমিশ্রণে তিনি গ্রামকে রূপান্তরিত করছেন ‘গুপ্ত বৃন্দাবন’ নামে এক আধ্যাত্মিক কেন্দ্রে। তরুণ প্রজন্মের জন্য নতুন দিশা প্রেম ঠাকুর দাস মহারাজের অন্যতম উদ্যোগ হলো গ্রামজুড়ে তরুণদের মধ্যে ব্রহ্মচর্য বা আত্মনিয়ন্ত্রণের শিক্ষা ছড়িয়ে দেওয়া। তিনি গ্রামের ক্লাব ও যুবসংঘগুলিতে গিয়ে বক্তব্য রাখছেন কু-অভ্যাসের ক্ষতিকর দিক নিয়ে। তাঁর ভাষায়, “তরুণ বয়সের কুপ্রবৃত্তিই ভবিষ্যতের ধ্বংস ডেকে আনে। তাই আত্মনিয়ন্ত্রণ ও সনাতনী শাস্ত্রজ্ঞানে পথ দেখাতে হবে।”
ইতিমধ্যেই কয়েকশো যুবক তাঁর কাছে ব্রহ্মচর্যের দীক্ষা গ্রহণ করেছে।

Thank you for reading this post, don't forget to subscribe!

তিনি বিশ্বাস করেন, একজন তরুণের আত্মিক ও শারীরিক শক্তি রক্ষাই জাতির মেরুদণ্ড। গোমাতা সংরক্ষণ ও দোল উৎসবের পুনর্জাগরণ বাওয়ালীতে শুরু হয়েছে ‘গৌড়ীয় দোল উৎসব’ প্রেম মহারাজের উদ্যোগে। সেই সঙ্গে গড়ে উঠেছে গোমাতা সংরক্ষণ বিপ্লব একটি শক্তিশালী আন্দোলন যা গ্রামের মানুষদের মধ্যে গরুকে ‘মাতা’ রূপে ভাবতে শিখিয়েছে। গ্রামে এখন গোমাতার সেবা একটি ধর্মীয় ব্রত হয়ে উঠেছে। গুরু পূর্ণিমার দিনটি বাওয়ালী গ্রামে এবার যেন এক বৈদিক উৎসবের রূপ নিয়েছে। যদিও প্রেম ঠাকুর দাস মহারাজ শারীরিকভাবে উপস্থিত ছিলেন না, তবুও প্রতিটি বাড়িতে তাঁর প্রতিকৃতি বা প্রতীক সামনে রেখে তাঁকে গুরু রূপে পূজা করা হয়। শত শত ভক্ত দিনটি কাটিয়েছেন কীর্তন, ধ্যান ও গীতাপাঠে। গ্রামবাসীদের মতে, প্রেম মহারাজ শুধু একজন সন্ন্যাসী নন তিনি একজন পথপ্রদর্শক, একজন সংস্কারক। তাঁর প্রেম, অনুপ্রেরণা ও অধ্যাত্মিক সাধনার মধ্য দিয়েই বদলে যাচ্ছে একটি গোটা গ্রাম। তরুণদের মধ্যে বাড়ছে ধর্মীয় চেতনা, সমাজে ফিরছে শৃঙ্খলা ও নৈতিকতা। একজন গ্রামবাসী বলেন, “ওনাকে গুরু না বলে উপায় নেই। উনি আমাদের হৃদয়ের মধ্যে বাস করেন। আজ গুরু পূর্ণিমায় ওনার অনুপস্থিতিও যেন উপস্থিতির মতো।” একজন সন্ন্যাসীর নিঃস্বার্থ ত্যাগ, প্রেরণা ও কর্মযজ্ঞ কিভাবে একটি সাধারণ গ্রামকে পরিণত করতে পারে আধ্যাত্মিক শক্তিকেন্দ্রে বাওয়ালীর গুপ্ত বৃন্দাবন তার এক জীবন্ত উদাহরণ। সনাতন ধর্মের এই নবজাগরণ হয়তো ভবিষ্যতে আরও অনেক গ্রামের পথ দেখাবে।

About The Author


Verified by MonsterInsights