পর্যটকের দেখা নেই লালবাগের নিউ প্যালেস ঘাটে, স্থানীয় মাঝিদের খালি হাতে বাড়ি ফিরে যেতে হচ্ছে


রাজেন্দ্র নাথ দত্ত:মুর্শিদাবাদ: মুর্শিদাবাদ জেলার লালবাগে ভাগীরথীর নিউ প্যালেস ঘাটে পর্যটনের মরসুমেও সারি সারি নৌকা বাঁধা। অথচ পর্যটকের দেখা নেই। দিনভর বসে থেকে প্রায়শই খালি হাতে বাড়ি ফিরে যেতে হচ্ছে মাঝিদের। রুজিরোজগারে টান পড়ায় পরিবারের সদস্যদের মুখে দুবেলা দুমুঠো শাক-ভাত তুলে দেওয়াই ওদের কাছে রীতিমতো চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সংসার চালাতে ইতিমধ্যে কয়েকজন অন্য পেশায় চলে গিয়েছেন। বয়সের ভারে শারীরিকভাবে কিছুটা দুর্বল মাঝিরা বাধ্য হয়ে পর্যটকদের আশায় দিনভর বসে থাকছেন। দিনের শেষে কেউ ১০০ টাকা, কেউ ৫০ টাকা আবার কেউবা খালি হাতে বাড়ি ফিরে যাচ্ছেন। টোটোর রমরমা শুরু হতেই তাদের কপাল পুড়েছে বলে দাবি মাঝিদের। তাদের আরও দাবি, আগে পর্যটনের মরসুমে ভালো রোজগার হলেও গত কয়েক বছর ধরে সেটাও বন্ধ হয়েছে।
পর্যিটনের শহর মুর্শিদাবাদ। সাবেক নবাবি তালুক মুর্শিদাবাদে রয়েছে নবাব ও তৎকালীন জমিদারদের একাধিক স্থাপত্য ও ভাস্কর্য নির্দশন। নবাবের শহরের দর্শনীয় স্থানগুলি ঘুরে দেখতে প্রায় সারা বছর পর্যটকদের আনাগোনা লেগেই থাকে। পর্যটকদের দর্শনীয় স্থানগুলি ঘুরিয়ে দেখানোর জন্য রয়েছে নবাবি ইতিহাসসের ধারক ও বাহক দুই শতাধিক ঘোড়ায় টানা টাঙা। নদীপথে নবাবি স্থাপত্যের শ্রেষ্ঠ স্থাপত্য নিদর্শন হাজারদুয়ারি প্যালেস এবং পার্শ্ববর্তী নিউ প্যালেসের নৈসর্গিক দৃশ্য চাক্ষুশ করানোর পাশাপাশি ভাগীরথীর পশ্চিমপাড়ে খোসবাগে নিয়ে যাওয়ার জন্য রয়েছে ৪৫টি নৌকা। হাজারদুয়ারি নৌকা পরিবহন সমবায় সমিতি অধীনে নৌকার মাঝিদের জীবন-জীবিকা নবাবের শহরের পর্যটনের উপর নির্ভরশীল। মাঝিরা বলেন, টোটো চালু হওয়ার পর থেকে দুঃসময়ের শুরু। আগে সারা বছর শাক-ভাতের পয়সাটা রোজগার হলেও শীতের মরসুমে ভালো রোজগার হত। এখন টোটোর বাড়বাড়ন্তে শীতের মরসুমেও রোজগার নেই। অন্য সময় তো বসে থেকেই কাটাতে হয়। সুনীল রায়, রবীন্দ্রনাথ হালদাররা চার দশকের বেশি সময় ধরে এই পেশার সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন। হাজারদুয়ারি প্যালেস সংলগ্ন ভাগীরথীর পাড়ে নৌকায় বসে বৃদ্ধি সুনীল রায় একরাশ দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলেন, টোটোয় বাজার দখলের আগে শীতের মরসুমে(জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি) ২৫-৩০ হাজার টাকা রোজগার হত। বছরের অন্য মাসগুলিতে চলে যাওয়ার মতো হত। কিন্তু গত ৮-১০ বছর ধরে শীতের মরসুমেও টেনেটুনে ৮-১০ হাজার টাকা রোজগার হচ্ছে। রবীন্দ্রনাথ হালদার বলেন, জানুয়ারি মাসে কিছুটা রোজগার হয়েছিল। ফেব্রুয়ারির শুরু থেকে একপ্রকার বসেই দিন কাটছে। কোনদিন টেনেটুনে ৫০টাকা হচ্ছে তো, আবার কোনদিন হচ্ছেনা। অল্প বয়সি যারা রয়েছে তাদের অনেকেই বাধ্য হয়ে অন্য কাজ করছেন। বয়স পয়ষট্টি পেরিয়েছে। আগের মতো সক্ষম নই। তাই বাধ্য হয়েই এই পেশায় রয়ে গিয়েছি। জানিনা এভাবে কতদিন টিকে থাকতে পারব।

Thank you for reading this post, don't forget to subscribe!

About The Author


Verified by MonsterInsights