এক অমোঘ কাব্যের নাট্যদর্শন- সূর্পণখা উবাচ


সূর্পণখা শুনলেই মনে পড়ে যায় এক মায়াবিনী রাক্ষসীর কথা যে রাবণের ভগিনী। পঞ্চবটী বনে লক্ষ্মণের হাতে, যার নাক-কান কাটা হয় রাম ও লক্ষ্মণকে বিয়ের প্রস্তাব দেবার জন্য। শুধু এইটুকুই আমরা জেনে এসেছি সূর্পণখা সম্পর্কে? এর বেশি বর্ণনা আমাদের খুব একটা জানা নেই। তবে এটুকু জানা যায় যে তিনিই রাম রাবণের যুদ্ধের উদ্যোক্তা। মানে পরোক্ষভাবে রামায়ণের গল্পের ক্লাইম্যাক্স সৃষ্টির পিছনে তার অবদান যথেষ্ট। কিন্তু কে এই সূর্পণখা।? শুধুই কি অশুভ এক শক্তি? নাকি তার কর্মকাণ্ডের পিছনে আছে কোনো সুপ্ত রহস্য? কেন অন্ধকার ঢাকা তার জীবন? সে কেন আর অন্য সাধারণ নারীর মতো সতী হয়ে উঠতে পারেনি? কেন ইতিহাস শুধু তার জন্যই এক ভয়াবহ যুদ্ধ লিখল, যার পরিণতিতে স্বর্ণলঙ্কা ছাড়খার হল?

Thank you for reading this post, don't forget to subscribe!

এসবের উত্তর আছে। উত্তর দিয়েছে সূর্পণখা নিজেই। আর সেই গবেষণাধর্মী আত্মকাব্য নাট্যরূপে উপস্থাপিত হল ১৬ ই জানুয়ারি সলটলেক ন্যাশনাল মাইম ইন্সটিউটে বাগুইআটি সহজিয়া প্রযোজিত ‘সূর্পণখা উবাচ’ নাটকে। সূর্পণখা উবাচ ১২ পর্বের একটি কাব্য যার রচয়িতা নির্দেশক প্রশান্ত সেন স্বয়ং। পৌরাণিক তথ্যসমৃদ্ধ নাটকটিতে ব্যবহার করা হয়েছে ক্লাসিকাল সংগীত। লাইভ আবহ। কণ্ঠ ও লাইভ হারমোনিয়ামে জ্যোতিষ্ক চ্যাটার্জী এবং শঙ্খ, নাল ও পার্কাসনে তন্ময় মন্ডল অসাধারণ। সূর্প অর্থাৎ কূলায় তৈরি রাক্ষসের মুখোশ। মঞ্চভাবনায় নির্দেশক একই সাথে সুন্দর ভাবে স্থান বিভিন্ন জোনে উপস্থাপনা করেন। স্বর্ণলংকা, পঞ্চবটী বন ও যুদ্ধক্ষেত্র। উল্লেখ্য যে এই নাটকের ১২টি পর্ব কোনোরকম আলোক নির্বাপন ও দৃশ্যপট পরিবর্তন ছাড়াই উপস্থাপিত।সূর্পণখা অর্ণিশা সেনের একক অভিনয় হলেও তিনি তার সাবলীল ভয়েস মড্যুলেশনে রামায়নের বিভিন্ন চরিত্র হয়ে উঠেছেন কখনো কখনো। প্রায় ৫০ মিনিট কাব্যটি তার ছন্দ মাত্রা অক্ষুণ্ণ রেখে নাট্যায়িত করা বেশ প্রশংসনীয়।
নির্দেশক প্রশান্ত সেনের অনন্য ও অভিনব মঞ্চপরিকল্পনাকে বাস্তবিক রূপ দিয়েছে সুদান হালদার, কৃত্তিকা বোস, পপি দাস ও প্রত্যুষা সেন। মঞ্চসজ্জায় কুলো বা সূর্পের ওপর রাক্ষস মুখ একেছেন চিত্রশিল্পী ঝিলাম রায়। এই নাটকের আলোর খেলা খুবই গুরুত্বপূর্ন যে দায়িত্ব যথার্থ পালন করে মায়াবী পরিবেশ সৃষ্টি করেছেন আলোক শিল্পী সুবল কর্মকার ও তার সহকারী সৈকত মান্না। সূর্পণখার অঙ্গনির্দেশনায় শ্রীমতী শালিনী বোস। পোশাক ও রূপদানে পপি দাস ও তনিমা মুখার্জী প্রশংসনীয়।
সার্বিক বিচারে নাটকটি সর্বপরিসরে উত্তীর্ণ, বহু মঞ্চে বারংবার উপস্থাপনযোগ্য সহজিয়ার এই ব্যাতিক্রমী প্রযোজনা।

About The Author


Verified by MonsterInsights