মুর্শিদাবাদে জলমগ্ন বহু এলাকা,তৈরি হচ্ছে নৌকা, কারিগররা বেজায় খুশি


রাজেন্দ্র নাথ দত্ত:মুর্শিদাবাদ : শাখা পদ্মার বুকে আছড়ে পড়ছে ছোট ছোট ঢেউ। ঘাটে তখন বাঁধা গোটা তিনেক নৌকা। একটু দূরেই ছড়িয়ে ছিটিয়ে বাঁশের সঙ্গে দড়ি দিয়ে বাঁধা হয়েছে গোটা পাঁচেক তাঁবু। কাছে যেতেই দেখা গেল তাঁবুর নীচে কোথাও চলছে শেষ মুহূর্তে নৌকা জোড়াতালির কাজ, কোনও তাঁবুর নীচে আবার একমনে ডোঙ্গা তৈরিতে ব্যস্ত কারিগররা। রানিনগর, সাগরপাড়া, জলঙ্গির শাখানদী, নালাগুলিতে জল বাড়ায় নদী পাড়েই এভাবে তাঁবু খাটিয়ে চলছে নৌকা-ডোঙ্গা তৈরি, সারাইয়ের ধুম। দ্রুত কাজ শেষ করতে ভাড়ায় আনা হচ্ছে নৌকা তৈরির কারিগরদের। মূল পদ্মা থেকে উৎস নিয়ে মুর্শিদাবাদের রানিতলা, রানিনগর, সাগরপাড়া, জলঙ্গির বাংলাদেশের সীমান্ত ঘেঁষে প্রবাহিত হয়েছে পদ্মার শাখানদী। মূল পদ্মার বেশিরভাগ অংশ বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হলেও শাখা পদ্মা ভারতীয় ভূখণ্ডের মধ্য দিয়ে বয়ে গিয়েছে। শাখা পদ্মার ওপারে ভারতীয় ভূখণ্ডে অনেকগুলি গ্রাম রয়েছে। রয়েছে কয়েক হাজার হেক্টর কৃষিজমি। বর্তমানে মূল পদ্মায় জলস্তর বাড়ায় পদ্মার শাখানদীর সঙ্গে সঙ্গে নালাগুলিতেও ব্যাপক জল বেড়েছে। নালা উপচে কৃষিজমি জলমগ্ন হয়েছে। এমনকী কোথাও কোথাও গ্রামের সীমানা পর্যন্ত পৌঁছে গিয়েছে পদ্মার জল। এই অবস্থায় মূল ভূখণ্ড থেকে নদী পেরনোর একমাত্র মাধ্যম হল নৌকা। আর তাতেই ভরা বর্ষায় বার বার যাতায়াতের জন্য প্রয়োজন পড়ছে আরও নৌকার। পাশাপাশি জল বাড়ায় মাছ ধরার জন্যও ডোঙ্গার চাহিদা বেড়েছে। তাই প্রতিবছর বর্ষার আগে শুরু হয়ে যায় নৌকা তৈরির ব্যস্ততা। তবে এবারে বর্ষার মধ্যে হঠাৎ করে আরও জল বাড়ায় নৌকা, ডোঙ্গার চাহিদা বেড়েছে। পাশপাশি বেড়েছে নৌকার কারিগরদের কদর। শুধু যে স্থানীয় কারিগররাই কাজ করছেন তা নয়, চাহিদা থাকায় বাইরে থেকেও আনা হচ্ছে নৌকার কারিগরদের। দৈনিক ৭০০ টাকা মজুরিতে নৌকা তৈরিতে হাত লাগাচ্ছেন তাঁরা। বর্তমানে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তৈরি হচ্ছে ইঞ্জিন চালিত বড় নৌকা। সাধারণত নৌকার ক্ষেত্রে বাবলা, কড়ুই, হিজল, মেহগনি কাঠের বেশি ব্যবহার হয়। তবে ছোট নৌকার ক্ষেত্রে কাঁঠাল গাছের কাঠও ব্যবহার করা হয়। কাঠ দিয়ে নৌকা তৈরির পরে আলকাতরা, তারকাটা, গজাল, পাটা ইত্যাদি ব্যবহার করা হয়। এক একটি বড় নৌকা তৈরিতে সাইজের প্রকারভেদে এক থেকে দেড় লক্ষ টাকার কাছাকাছি খরচ পড়ে। তবে জলে মাছ ধরার মতো ছোট ছোট ডোঙ্গা নৌকাগুলি হাজার দুয়েকের মধ্যেই তৈরি করা যায়। সাগরপাড়া থেকে রানিনগরের হারুডাঙায় এসেছেন কারিগর সমীর মণ্ডল। তিনি বলেন, প্রতিবছর এই সময়ে নৌকা তৈরির জন্য ভাড়ায় নিয়ে যায় আমাকে। পুজোর আগে রানিনগরে নৌকা তৈরির জন্য ভাড়ায় এসেছি। যা উপার্জন করব পুজোটা ভালো কাটবে আশা করি। নৌকার মালিক মঙ্গল শর্মা বলেন, এই সময় নৌকার মিস্ত্রিদের খুব চাহিদা। বেশি টাকা দিয়ে ওঁদের এনে নৌকা তৈরি করাচ্ছি।

Thank you for reading this post, don't forget to subscribe!

About The Author


Verified by MonsterInsights