বহরমপুরে গুলিতে ঝাঁজরা ব্যবসায়ী,ঘটনাস্থলে মৃত্যু, চাঞ্চল্য এলাকা জুড়ে


রাজেন্দ্র নাথ দত্ত:মুর্শিদাবাদ: ফের রাজ্যে শুটআউট। বুধবার প্রাতর্ভ্রমণে বেরিয়ে দুষ্কৃতীদের গুলিতে ঝাঁজরা ব্যবসায়ী। দুষ্কৃতীরা ব্যবসায়ীকে লক্ষ্য করে ৭-৮ রাউন্ড গুলি চালায় বলে অভিযোগ। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে মুর্শিদাবাদ জেলার বহরমপুরের রাধারঘাট – ১ গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্য। কে বা কারা গুলি চালাল, তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ। প্রাতঃভ্রমণে যাওয়ার অভ্যাস রয়েছে জমি ব্যবসায়ী বহরমপুরের নাথপাড়া এলাকার বাসিন্দা প্রদীপ দত্তর। দীর্ঘ দিন ধরে ওই এলাকার বাজারে তাঁর একটি প্লাইউড ও কাচের দোকান রয়েছে। একটি হার্ডওয়ারের দোকান রয়েছে। এছাড়াও তিনি কনট্রাক্টরি ব্যবসা করতেন বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে।ব্যবসায়ী হিসেবে বেশ পরিচিত তিনি। এলাকাবাসীরা জানিয়েছেন, বছর চারেক আগেও সক্রিয় রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন প্রদীপবাবু। তিনি তৃণমূল কংগ্রেসের বহরমপুর (পশ্চিম) ব্লকের সহ-সভাপতি পদে ছিলেন। মুর্শিদাবাদ জেলা পরিষদের তৃণমূল সদস্য এবং ওই এলাকার বাসিন্দা রাজীব হোসেন বলেন, শারীরিক অসুস্থতার কারণে গত কয়েক বছর প্রদীপবাবু তৃণমূলের হয়ে সক্রিয় রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না। তিনি মূলত নিজের ব্যবসার কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকতেন। তাই কী কারণে এই খুন তা নিয়ে ধোঁয়াশা রয়ে যাচ্ছে। অন্যান্য দিনের মতো বুধবার সকাল সাড়ে ছটা নাগাদ বাড়ি থেকে হাঁটতে বেরন তিনি কয়েকজন বন্ধুর সঙ্গে।প্রদীপবাবু দ্রুত হাঁটতে শুরু করলে তাঁর বন্ধুরা কিছুটা পিছিয়ে পড়েন। তিনি যখন নাথপাড়া এলাকার কাছাকাছি ছিলেন সেই সময় বাইকে চড়ে দুই দুষ্কৃতী আসে।কিছু বুঝে ওঠার আগেই তৃণমূল কর্মীকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়া হয়। লক্ষ্য করে ৭-৮ রাউন্ড গুলি চালায়। গুলিবিদ্ধ অবস্থায় কিছুটা এগনোর চেষ্টা করেন ব্যবসায়ী। তবে পারেননি। দুষ্কৃতীরা আবার গুলি চালায়। রক্তাক্ত অবস্থায় রাস্তায় লুটিয়ে পড়েন ব্যবসায়ী।
দুষ্কৃতীরা আবার গুলি চালিয়ে এলাকা ছাড়ে তারা।গুলির শব্দ শুনে ছুটে আসেন স্থানীয়েরা। তাঁরা দেখেন, ক্ষেতের ধারে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছেন ওই তৃণমূল কর্মী। উদ্ধার করে স্থানীয় বেসরকারী হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। খবর পাওয়ামাত্রই বহরমপুর থানার বিশাল পুলিশ বাহিনী ঘটনাস্থলে পৌঁছয়।দেহ ময়নাতদন্তের জন্য মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে বলে পুলিশ সূত্রে খবর। বছর পঞ্চাশের প্রদীপকেকে বা কারা খুন করল, তা নিয়ে দেখা দিয়েছে ধোঁয়াশা। প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, দুষ্কৃতীদের মাথায় হেলমেট ছিল। তাই তাদের কাউকে চেনা যায়নি। ওই দুষ্কৃতীরা বহিরাগত নাকি এলাকার কেউ, তা এখনও স্পষ্ট নয়। দুষ্কৃতীরা বেশ কয়েকদিন ব্যবসায়ীর গতিবিধির উপর নজর রাখার পর গুলি চালিয়েছে বলেই প্রাথমিক তদন্তে অনুমান পুলিশের। এলাকার সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করেছে পুলিশ। ওই ফুটেজের মাধ্যমে বাইক এবং দুষ্কৃতীদের চিহ্নিত করা সম্ভব হবে বলেই মনে করছেন তদন্তকারীরা। খুনের নেপথ্যে ব্যবসায়িক শত্রুতা নাকি রাজনৈতিক কোনও কারণ রয়েছে, তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ।ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী মন্টু দেবনাথ বলেন, ‘‘আমরা তখন সবে চা খেতে বসেছি। হঠাৎ করে শব্দ পেলাম। প্রথমে ভেবেছিলাম চকলেট বোমার শব্দ। পরে মহিলাদের চিৎকার শুনে ছুটে যাই। ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখি প্রদীপ রাস্তায় পড়ে আছেন।’’ কয়েক জন স্থানীয় মহিলার দাবি, একটি বাইকে করে তিন জন দুষ্কৃতী এসে প্রদীপকে খুব কাছ থেকে কয়েক রাউন্ড গুলি করে। তার পর পাশের একটি বড় রাস্তা ধরে পালিয়ে যায়। মুর্শিদাবাদ পুলিশ জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাজিদ ইকবাল জানান, এলাকার অনেকের সঙ্গে কথা বলে খুনের সময়কার পরিস্থিতি জানার চেষ্টা চলছে। কী কারণে খুন খতিয়ে দেখছে পুলিশ। উল্লেখ্য, গত সোমবার রাতে মুর্শিদাবাদ জেলার কান্দী মহকুমার সালারে বোমাবাজির ঘটনা ঘটেছিল। সেই ঘটনায় আলাই শেখ নামে এক তৃণমূল কর্মী খুন হন। ইতিমধ্যেই এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে তিন জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

Thank you for reading this post, don't forget to subscribe!

About The Author


Verified by MonsterInsights