১৮৯৮ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর অবিভক্ত বাংলার নোয়াখালী জেলার ফেণী মহকুমায় জন্ম নিয়েছিলেন বিশিষ্ট বৈষ্ণব পণ্ডিত এবং লেখক হরিদাস দাস বাবাজী। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত তিনি রচনা করে গিয়েছেন গৌড়ীয় বৈষ্ণব সাধকদের আকর গ্রন্থ ‘শ্রীশ্রীগৌড়ীয় বৈষ্ণব অভিধান’। বর্তমান ডিজিটাল যুগে সারা বিশ্বের গবেষক ও বৈষ্ণব ধর্মের অনুগামীদের কাছে সেই বই তুলে দিতে এগিয়ে এল ভক্তি বেদান্ত রিসার্চ সেন্টার।
প্রকল্পের সম্পাদক ড. অভিষেক বসু জানান, “প্রায় আট-নয় বছরের সুদীর্ঘ পরিকল্পনা এবং অনেকের সম্মিলিত পরিশ্রমের ফলে, হরিদাস দাস বাবাজীর একা হাতে তৈরি এই আশ্চর্য কাজ আজ সমগ্র বিশ্ববাসীর জন্যে অর্পিত হলো। এই এনসাইক্লোপিডিয়া শুধু বৈষ্ণব ধর্মের জন্য নয়, সংস্কৃতি ও ইতিহাসের যেকোনো গবেষকের কাছে আকরগ্ৰন্থ। বিপুল অবয়ব এবং ভাষার সীমাবদ্ধতার কারণে এই গ্রন্থ যাদের নাগালের বাইরে ছিল, দেশ-বিদেশের সেইসব পাঠক এই ডিজিটাল সংস্করণ থেকে বিশেষ উপকৃত হবেন।” এই ওয়েবসাইটে খণ্ডে খণ্ডে অভিধানের অংশগুলি তুলে ধরা হচ্ছে। আপাতত, ‘চরিতাবলী’, ‘গ্ৰন্থাবলী’র মতো অংশ উৎসাহী পাঠক পড়তে পারবেন একটিমাত্র মাউস ক্লিকে। চৈতন্য মহাপ্রভু থেকে শুরু করে বিশ শতক পর্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্বের পরিচিতি এখানে ধরা আছে। ধরা আছে প্রাসঙ্গিক বিপুল সাহিত্যের সারাৎসার। যা অভিনব, সার্চ ইঞ্জিনের মাধ্যমে সমগ্ৰ অভিধান থেকে নির্দিষ্ট কোনো বিষয়ের তথ্য এক লহমায় দেখে নেওয়া যাবে। হরিদাস দাস বাবাজীর কর্মক্ষেত্র নবদ্বীপের হরিবোল কুটির আশ্রমে এর উদ্বোধন করে এ বিষয়ে একটি আলোচনাসভার আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ভক্তিবেদান্ত রিসার্চ সেন্টারের ডিন ড. সুমন্ত রুদ্র, বৈষ্ণব অভিধান প্রকল্পের সম্পাদক ড.অভিষেক বসু, নিত্যানন্দবংশীয় প্রভুপাদ নিত্যগোপাল গোস্বামী, নবদ্বীপ পুরাতত্ত্ব পরিষদের প্রতিনিধিগণ এবং নবদ্বীপ গৌড়ীয় বৈষ্ণব সমাজের বহু জ্ঞানী-গুণী ব্যক্তিত্ব। ভক্তিবেদান্ত রিসার্চ সেন্টার ও নবদ্বীপ হরিবোল কুটিরের যৌথ উদ্যোগে এবং নবদ্বীপ গৌড়ীয় বৈষ্ণব সমাজের সহযোগিতায় নবদ্বীপ পুরাতত্ত্ব পরিষদ প্রাঙ্গণে আলোচনাসভায় গৌড়ীয় সমাজের গৌরব, বাংলার জ্ঞানচর্চার ঐতিহ্য এবং হরিদাস দাস বাবাজীর বৈষ্ণব-জীবনের নানা দিক তুলে ধরেন বক্তারা।
ড. সুমন্ত রুদ্র বলেন, “হরিদাস দাস বাবাজীর গ্রন্থসংগ্রহ আমাদের বৈষ্ণব ঐতিহ্যের এক অমূল্য ভাণ্ডার। আজকের প্রজন্ম তাঁর কর্মযজ্ঞের পরিচয় পেলে বৈষ্ণব গবেষণার নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে।”
