রাজেন্দ্র নাথ দত্ত :মুর্শিদাবাদ: চলতি মাসের ১৪মার্চ দোল ও ১৫মার্চ হোলি। এই রং-এর উৎসবে মেতে উঠবেন আট থেকে আশি সকলেই। আবিরের বিষাক্ত কেমিক্যাল থেকে বাঁচতে ভেষজ আবিরের জুড়ি মেলা ভার। মুর্শিদাবাদে শুরু হয়েছে ভেষজ আবির তৈরির কাজ। বছরখানেক আগে ভেষজ আবিরের চাহিদা এত বিপুল পরিমাণে ছিল না। তবে আবিরে মেশানো কেমিক্যাল ও সিন্থেটিকের কারণে এলার্জি-সহ নানা ধরনের সমস্যায় ভোগেন অনেকেই। তাই বাড়ছে ভেষজ আবিরের চাহিদা।এই আবির তৈরি করা হয় প্রাকৃতিক সুগন্ধির সঙ্গে গাঁদা, অপরাজিতা, কাঁচা হলুদ, জবা-সহ একাধিক ফুল ও গাছের ছাল ও পাতা দিয়ে। এই আবির তৈরি করতে সময় লাগে ৮ থেকে ১০ দিন। ভেষজ আবির স্বাস্থ্যসম্মত এবং সুগন্ধি হওয়ার জন্য বাজারে চাহিদা তুঙ্গে। বর্তমানে বাজারে ১০০ গ্রাম ভেষজ আবিরের দাম রয়েছে ২৫ টাকা। মুর্শিদাবাদ বালিয়া প্রেরণা ফাউন্ডেশনের সভাপতি বলেন, রাসায়নিক যুক্ত আবির মেখে অনেকেই এলার্জিতে ভোগেন। দোলের পরে নানান সমস্যায় ভোগেন অনেকেই। তাই কেমিক্যাল আবিরের ব্যবহার বন্ধ করে ভেষজ আবিরের ব্যবহার বেশি করতে হবে।আবির কারখানার কর্মী বলেন , ‘আমারা ৬টি রঙের আবির তৈরি করছি। এই আবিরে কোনও কেমিক্যাল মেশানো হয় না। পাঁচ বছর ধরে এখানে আবির তৈরি করছি। প্রায় দশ কুইন্টাল আবির প্রস্তুত হয়ে গিয়েছে।’
আবির বিক্রেতা বাপি দাস বলেন, ‘আগে কলকাতার কেমিক্যাল যুক্ত বিভিন্ন রকমের আবিরের চাহিদা ছিল। কিন্তু বর্তমানে ভেষজ আবিরের চাহিদা বাড়ছে।’
নানা ধরনের ফুল, পাতা ও ভেষজ জিনিস দিয়ে এই আবির তৈরি বেশ কয়েক বছর ধরেই বিক্ষিপ্ত ভাবে শুরু হয়েছে রাজ্যের বিভিন্ন এলাকায়। তবে এই জেলায় ফুল চাষ ও ফুল ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত লোকজনের অভিমত, যথেষ্ট চাহিদা থাকলেও সঠিক পরিকল্পনা ও বিপণনের অভাবে ভেষজ আবির অন্য আবিরের তুলনায় হোলির বাজারে পিছিয়ে রয়েছে। তাঁদের বক্তব্য, সঠিক পরিকল্পনা নিয়ে উৎপাদন ও বিপণন বাড়াতে পারলে ভেষজ আবির তৈরিকে ঘিরে বিকল্প কর্মসংস্থানের সুযোগও তৈরি হতে পারে গ্রামীণ এলাকায়।
উত্তরোত্তর চাহিদার কথা মাথায় রেখে জেলার ৮টি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার স্বনির্ভর গোষ্ঠীর ১০০ জন মহিলাকে প্রশিক্ষণ দিয়ে ভেষজ আবির তৈরির পরিকল্পনা নিয়েছে মুর্শিদাবাদ বালিয়া প্রেরণা ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে । বিপণনের সমস্যার কথা স্বীকার করে নিয়ে মুর্শিদাবাদ বালিয়া প্রেরণা ফাউন্ডেশনের সহ সভাপতি বলেন, ‘বিপণনের বিষয়ে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগিতা করবে। কলকাতা–সহ রাজ্যের বিভিন্ন এলাকার সরকারি স্টলে এই স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলাদের উৎপাদিত ভেষজ আবির বিক্রির ব্যবস্থা করা হবে।’ফুলচাষি ও ফুল ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদকের অভিযোগ, ভেষজ আবির–সহ ফুল থেকে বিভিন্ন উপজাত দ্রব্য তৈরি পরিকল্পনা স্তরেই থেকে গিয়েছে। যেমন সরকারি ঘোষণামতো জেলা থেকে ভিন্ রাজ্যে ফুল রপ্তানির কাজ শুরুতেই বন্ধ হয়ে গিয়েছে। সরকারি স্তরে একাধিকবার বাড়তি বা অবিক্রীত ফুল থেকে উপজাত দ্রব্য তৈরির পরিকল্পনার কথা ঘোষণা করা হলেও কাজের কাজ কিছু হয়নি। জেলায় ফুল থেকে উপজাত দ্রব্য তৈরির বড় ইউনিট এখন গড়ে ওঠেনি বলে তাঁর বক্তব্য। তবে মুর্শিদাবাদ –সহ বিভিন্ন জায়গায় হোলি এলে বিক্ষিপ্ত ভাবে ভেষজ আবির তৈরি হয়। কিন্তু ওই পর্যন্তই। তিনি বলেন, ‘ভেষজ আবিরের চাহিদা বাড়ছে ঠিকই। কিন্তু সঠিক বিপণনের অভাবে ভেষজ আবির যেমন মানুষের কাছে পৌঁছচ্ছে না, তেমনই উৎপাদনও বাড়ছে না। বাজারে ভেষজ আবিরের নামে যে আবির বিক্রি হচ্ছে সেই আবির কতটা ভেষজ সে নিয়ে প্রশ্ন থেকে যায়। আমরাও চাই ফুল থেকে আবির–সহ উপজাত আরও জিনিস তৈরি হোক।’মুর্শিদাবাদ বালিয়া প্রেরণা ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে ভেষজ আবির তৈরির প্রশিক্ষণ নিতে আসা ছবি দাস বলেন, ‘১০০ দিনের কাজ বন্ধ। ভেষজ আবির তৈরি করে পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছি।’ লালবাগের এক আবির বিক্রেতা হিমাংশু দাসের পরিষ্কার কথা, ‘ভেষজ আবির ভালো। কিন্তু দাম বেশি। এ কারণেই ভেষজ আবিরের বাজার এখনও তৈরি হয়নি। সাধারণ আবির ১৫০ টাকা কিলো প্রতি বিক্রি হলেও ১০০ গ্রাম একটা ভেষজ আবিরের প্যাকেটের দাম ৩০-৪০টাকা। তাই বিশেষ কিছু ক্রেতাদের জন্যে কিছু ভেষজ আবির রাখলেও অন্য আবির বেশি করে রাখতে হয়।’ তা সত্ত্বেও জেলায় ফুল ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত মানুষজনের আশা, সঠিক বিপণন করতে পারলে এ বারের হোলিতেও সাধারণ আবিরের সঙ্গে পাল্লা দিতে পারবে ভেষজ আবির।
