তাঁতের বাজার মন্দা, বহুরূপী সেজে উপার্যনের পথেও কাটাঁ লোকসভা নির্বাচন! আক্ষেপ নদীয়ার বহুরূপী ও সাজ শিল্পীদের।


গোপাল বিশ্বাস-নদীয়া- চৈত্রের শেষের দিকে যে সকল উৎসব অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয় তার মধ্যে অন্যতম হলো শিবের গাজন, নীল ষষ্ঠী পুজো চড়ক উৎসব, প্রভৃতি। আর বিশেষ করে গ্রাম বাংলা তথা মহঃস্বল এলাকায় এই অনুষ্ঠান গুলো আজি পুরোনো ঐতিহ্য, নিয়ম নিষ্ঠা ও রিতী মেনেই অনুষ্ঠিত হয়।আর এই অনুষ্ঠানের মতোই অন্যতম অষ্টক গান, বহুরূপী শিল্পীদের বিভিন্ন বেশে সেজে নাচগান সমান ভাবেই সমাদৃত। যদিও বহু এলাকায় এই অষ্টক গান আজ প্রায় বিলীনের পথে, আর প্রদীপের আলোর মতো টিম টিম করে জ্বলছে বহুরূপী শিল্পী ও তাদের সাজ শিল্পও। আর বিশেষ করে তথাকথিত ডিজিটাল যুগ ও বর্তমান আধুনিকতার ছোয়ায় থাকা এই প্রজন্মের কাছে হয়তো এগুোর পরিচিতি যেমন খুব একটা নেই, তেমনই হয়তো তাদের চোখেও পড়েনা এই শিল্প কলা।

Thank you for reading this post, don't forget to subscribe!

আর এবছরে বাংলার বছরের শেষের আগেই ঘোষণা হয়েছে লোকসভা নির্বাচন ২০২৪ এর দামামা। ফলত চৈত্রের উত্তাপের সাথেই পাল্লা দিয়ে চলছে রাজনৈতিক উত্তাপও। আর এরই সন্ধিক্ষণে শুক্রবার ছিলো নীল ষষ্ঠী ও শনিবার চড়ক পুজো, সহ চলছে গাজন উৎসবও।

আর নদীয়ার শান্তি পুর, ফুলিয়ার একাধিক জায়গায় বহুরূপী সেজে এই গাজন উৎসব অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে আজও। তেমনই শুক্রবার চৈত্রের রোদকে উপেক্ষা করেই ঢাকের তালে গাজন উপলক্ষে শিব পার্বতী সেজে মেতে উঠলেন ফুলিয়ার বিভিন্ন এলাকার মানুষ। সকাল থেকেই শুরু হয়েছে শিব, পার্বতী, রাধাকৃষ্ণ সহ বিভিন্ন দেব দেবীর রূপের সাজে বহুরূপী দের আনাগোনা। তবে কোথাও যেন সেই প্রীপের নিচেই অন্ধকারের মতো আক্ষেপ এই বহুরূপী শিল্পীদের।

কারণ নদীয়ার ফুলিয়া চটকাতলা এলাকার সুখেন সরকার, বিশ্বজিৎ বসাকেরা জানান তারা সহ অধিকাংশ বহুরূপী শিল্পী তাঁত শিল্পের সঙ্গে যুক্ত। তাঁতের বাজার একদম খারাপ হওয়ার কারনে বিগত দশ বছর ধরে তারা এই পেশায় নিযুক্ত আছেন। তারা আরও জানান প্রতিবছরই এই চৈত্র মাস উপলক্ষে গাজন উৎসবে তারা এই রকম বহুরূপী সেজে নৃত্য, অভিনয় পরিবেশন করে। তবে এবছর এই সময়ে লোকসভা নির্বাচনের কারনে বায়না তেমন হয়নি, এক পেশা ছেড়ে অন্য পেশায় এই সময় দুটো বার্তি রোজগারের আশায় এসেছি, কিন্তু এবছর চাহিদা কমে যাওয়ায় মন খারাপ তাদের। শুধু তাদের নয়, একই ভাবে আক্ষেপ শোবা গেলো এই বহুরূপী সাজের সাজানোর শিল্পির গলাতেও।নদীয়ার শান্তিপুরের বাসিন্দা মতিলাল কর্মকার জানান বিগত কয়েক দশক ধরে এই পেশায় যুক্ত, কিন্তু এবছর চাহিদা কম, কারন হিসেবে তিনিও লোকসভা নির্বাচনকেই তুলে ধরেন। পাশাপাশি তিনি আরও জানান পেশাগত ভাবে তিনি থিয়েটার, যাত্রা শিল্পের সাথে যুক্ত, কিন্তু এই বহুরূপী সহ এই গ্রামবাংলার থিয়েটারের চাহিদা বর্তমানে একদমই নেই, সাথে মেলপনা কোন সরকারি সাহায্য, এই পুরোনো ঐতিহ্য বাহী শিল্প কে বাচিয়ে রাখতপ এগিয়ে আসেনি কেও।

এবছর সাত- আট টি জায়গায় যেতে হবে সাজাতে, কিন্তু একটা সময় ছিলো সংখ্যা টা অনেক হতো, এখন আর তা হয় না। তবে অল্প হলেও এদিন তীব্র দাবদাহের মধ্যেই ফুলিয়া সহ বিভিন্ন এলাকায় দেখা গেলো এই গাজন উৎসবপ মেতে উঠতে স্থানীয় দের।পাশাপাশি মাঝে মধে্যই জীবন্ত দেবদেবীকে দেখা গেলো প্রচন্ড প্রখর রোদে হাত থেকপ কিছুটা স্বস্তি পেতে পাখার বাতাস খেয়ে নিচ্ছেন কোথাও বা ঠান্ডা পানীয় জল খেয়ে বিশ্রাম নিতে।

তবে তথাকথিত ডিজিটাল যুগ বা আধুনিকতার ছোয়ায় যতোই মানুষ নিজেদের এগিয়ে নিয়ে যাক নদীয়ার পুরোনো ঐতিহ্যকে যে আজও শান্তিপুর, ফুলিয়ার মতো এলাকার মানুষ বাচিয়ে রেখেছে এটাই বড় পাওনা, তবে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম কতোটা এই ভাবে ঐতিহ্যকে ধরে রাখবে এটাই এখন প্রশ্ন।

About The Author


Verified by MonsterInsights