ডানকুনি পৌরসভা নির্বাচনে ১৮ নং ওয়ার্ডে বামফ্রন্ট মনোনীত সিপিআইএম প্রার্থী “বুবাই”


তন্ময় ভৌমিকঃ এই যে ছেলেটিকে দেখছেন মন দিয়ে মাছ বিক্রি করছে বাজারে বসে, এই ছেলেটি এবারে ডানকুনি পৌরসভা নির্বাচনে ১৮ নং ওয়ার্ডে বামফ্রন্ট মনোনীত সিপিআইএম প্রার্থী, ঠিক ভোর ৫ টার সময় ঘুম থেকে উঠেই ভাঙাচোরা সাইকেল নিয়ে বেরিয়ে পড়ে ছেলেটা মাছের আড়তে লাইন দিতে, এই মাঘের শীতের রাতে যখন লেপের নিচের ঘুম আপনার বড় প্রিয়, তখন ছেলেটিকে নামতে হয় কঠিন জীবন যুদ্ধে, কম পুঁজির ব্যবসা, তাই ভোরে না গেলে ভালো মাছ পাওয়া যাবেনা, দরদাম করে মাছ কিনে বাজারে বসতে বসতেই সকাল সাতটা,তখনো বাসি মুখ, সকালের চা বিস্কুট ও জোটে না ঠিক মতো, এদিকে বাজার জমে উঠছে আসতে আসতে, চেনা-অচেনা বা অল্প চেনা সকলেই সদাহাস্য, পরিশ্রমী আর সৎ এই ছেলেটিকে চেনে লাল পার্টির লোক বলে, মিশুকে ছেলেটি বিক্রি বাটটার মাঝেই খোঁজ নেয়, “কাকু-কাকিমা গত রবিবার এলেন না যে? শরীর ঠিক আছেতো? কাকু-কাকিমা কেমন আছেন? ওষুধ গুলো ঠিক ঠাক খাচ্ছেনতো? আবার কাউকে কাউকে জিজ্ঞেস করেন “আপনার ছেলে-মেয়ে বা বৌমা ও নাতি-নাতনির নামটা উঠেছে তো ভোটার লিস্টে? নইলে ফর্ম নিয়ে আমি আপনার বাড়ি যাবো ফর্ম পূরণ করার জন্য তারপর আমি ফর্ম লিখে জমা করে দেবো,”আবার কাউকে কাউকে বলেন দাদা, দিদি ছেলে-মেয়ের’ তো নতুন ক্লাস হলো বইপত্র সব কেনা হয়েছেতো? নইলে বলবেন আমাদের,এভাবেই সময় এগোয়, বাজার ফাঁকা হয়, কেউ কোনোদিন বলেনি এসে কাল খারাপ মাছ দিয়েছিলে কিংবা ওজনে কম দিয়েছিলে, কারণ ওই শিক্ষাটাই নেই ছেলেটির সিলেবাসে।ছেলেটি বলে “আমার পার্টি শিক্ষা দেয় সবার আগে মানুষের বিশ্বাস আর ভরসা অর্জন করতে হবে, মানুষের পাশে দঁড়ানোর জন্যেও যোগ্যতা লাগে আর সেই যোগ্যতা অর্জন করতে হয় নিবিড় জীবন চর্চায়”, আমরা যারা কমরেড তারা অবাক হয়ে যাই এই প্রাণশক্তি এই স্বভাব বৈরাগ্যের চেতনায়,না ছেলেটি জাক দেরিদা, মার্কেজ, গ্রামসি পড়েনি, নিদেন পক্ষে মাও সে তুং ও পড়েনি, তবে হ্যাঁ প্রতিদিনের রুটিনে গণশক্তির প্রতিটা পাতায় প্রতিটা খবরের খুঁটিনাটি নখ দর্পণে, বাজার থেকে বাড়ি ফিরে কোনরকমে দুটো খেয়ে দেয়েই বেরিয়ে পড়ে ছেলেটা, সঙ্গী সেই ভাঙাচোরা সাইকেল, পার্টি অফিসের ঘরটা পরিষ্কার করতে হবে, পার্টির ঝান্ডা ও পোস্টার লাগাতে হবে, দেওয়াল চুনকাম করতে হবে ও দেওয়াল লিখতে হবে, মুশকিল আসান এই ছেলেটাগোটা পাড়ার সাথে নিবিড়,নিশ্ছিদ্র যোগাযোগ, পাড়ার সবার আদরের ও স্নেহের শ্রদ্ধার “বুবাই”, পোশাকি একটা নাম আছে বটে ছেলেটার তবে এই নামেই চেনে গোটা মহল্লার ছেলে-ছোকরা থেকে শুরু করে বয়োজ্যেষ্ঠরা, পাড়ায় কোনো বাড়িতে অসুস্থ বৃদ্ধ-বৃদ্ধা’কে হাসপাতালে ভর্তি করতে হবে, কারোর বাড়িতে ওষুধ এনে দিতে হবে,কারোর হটাৎ রক্তের প্রয়োজন, কারো বাড়ির ছেলে-মেয়েটা বই খাতা কিনতে পারছে না ছেলেটার সব দিকে নজর,সবটাই স্বেচ্ছাশ্রম,সারাদিন পার্টির কাজ,পাড়ার লোকের কাজ করে শ্রান্ত শরীরটা বিছানায় এলিয়ে দিয়েই চিন্তা আসে আবার ভোর পাঁচ উঠতে হবে, দারিদ্র্য আছে বিলক্ষণ কিন্তু তার চাইতেও বড় ছেলেটার শানিত চেতনা,পার্টিই তার ঘর-বাড়ি ও পরিবার, এই ছেলেটিই করোনা আবহে গত লক ডাউনের সময় গায়ে লাল এপ্রন চাপিয়ে গোটা মহল্লা ঘুরে বেরিয়েছে রেড ভোলেনটিয়ার্স-এর দায়িত্ব পালন করতে,বাড়িতে বয়স্ক মা’-কে রেখেই ছুটে গেছে মানুষের আপদে-বিপদে, একাকি অসহায় বৃদ্ধাকে উদ্ধার করে অ্যাম্বুলেন্সে চাপিয়ে হাসপাতালে পৌঁছে দিয়েছে, করোনা আক্রান্তের বাড়িতে ওষুধ পৌঁছে দিয়েছে, বাড়ি বাড়ি ঘুরে স্যানেটাইজেসন করেছে,আবার ধর্মঘটের মিছিলে আওয়াজ তুলেছে “বেকারের যুবক-যুবতী’-দের কাজের জন্য ও কাজের দাবিতে মিছিল হেঁটেছে”,রেড ভোলেনটিয়ার্স থেকে রেড আর্মি,অনায়াস যাতায়াত, অদ্ভুত নমনীয়তা, হ্যাঁ এই ছেলেটিকেই সিপিআইএম ডানকুনি পৌরসভা নির্বাচনে ১৮ নং ওয়ার্ডে প্রার্থী করেছে,কঠিন লড়াই ও অসম লড়াই, একদিকে তৃণমূলের লাখ লাখ টাকার মালিক অন্যদিকে বাজারের সাধারণ মাছ বিক্রেতা কিন্তু এই অসম লড়াইতেও তৃণমূলীদের রাতের ঘুম কেড়ে নিয়েছে ছেলেটির জনপ্রিয়তা,ছেলেটির মানুষের মধ্যে মিশে যাবার ক্ষমতা আছে,যে শ্রেণীর লড়াই ও লাল ঝান্ডার পুঁজি সেই শ্রেণীর একজন বিশ্বস্ত সৈনিক ছেলেটি,পার্টি সঠিক লোকের হাতেই তুলে দিয়ে ব্যাটন, এবার জবাব দেবে জনতা, জিততেই হবে ছেলেটিকে, কমরড কমরেড প্রবীরজিত সিংহ(বুবাই)’কে, মানুষের ভালোবাসা শুধু গোলাপে নয় এবার ইভিএম মেশিনে ফুটবে, আগামী দিনের কঠিন লড়াইয়ের শুভেচ্ছা ও ভালোবাসা রইলো কমরেড।

About The Author


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Verified by MonsterInsights